আমি কান পেতে শুনি।


আমি কান পেতে শুনি তোমাদের কোলাহল,তোমাদের ভুদ-অদ্ভুদ সাড়া-শব্দ
তোমাদের লোকালয়ের যতোনা রঙ মিছিল, আগুন ধরায় পড়শীদের আঙ্গিনায়,
শুনি কান পেতে,হাজার বেলার ফিকে হওয়া কান্নাস্বর।


সেই ছেলেবেলায় শিখেছি রেল লাইনে কান পেতে কিভাবে শুনতে হয় আগমন,
শুনেছি কানে হাত রেখে, মন্ডল বাড়ীর উঠোনে চুপি চুপি ন্যায়ের সাথে চলা মিথ্যে বাহাস,
চোখের জ্বলের টুপটাপ বয়ে চলার শব্দ আমি এখনোও শুনি ভীষন সংগোপনে!
তোমাদের শহরের রাস্তায় আমি কান পেতে থাকি,তোমাদের ঘর-দরজায় কান পেতে শুনি
গা-গতরে অভিজাত মানুষদের আওড়ানো খিস্তি খেউড়;
কালো ধোঁয়ার আঁধারে আমি কান পেতে শুনি শিসার প্রবল হুংকার, নি:শ্বাসেও কান পেতে রই।


আমি কান পেতে শুনি, ভাঙ্গা-চোরা সময়ের বুকে চোরা স্রোতের মৃদু গর্জন,
অধিকারের পোড়া রুটির গন্ধে কাতর , জীবন যোদ্ধার হৃত যৌবনের গোঙানি;
সেই ছেলেবেলার রেল লাইনে আজ সভ্যতার যাতায়াত,আমি তাও শুনি প্রবল আগ্রহে।


আমি ফসলের মাঠে গিয়ে কান পেতে শুনেছিফসলের গান, ফসলের কথা,
ঘাস ফড়িংয়ের মন ভালো নেই, অভাবে পোড়ে তার ঘর, শুনেছি তার ঘর-গেরস্থালীর শুনশান,
ফসলের বিদায়ে উদ্বাস্ত হওয়া পোকাগুলোর সারিবদ্ধ পদযাত্রা শুনেছি একাকার হয়ে!
তোমাদের যন্ত্র দানবের কন্ঠে শুনি কিসের আওয়াজ?
সবুজ ঢেকে ধুসরের মেলায়আমি কান পেতে শুনি, মেকী আনন্দের ফিসফিসিয়ে চলা সংশয়;
যাত্রা-নর্তকীর বুকে শুনেছি উদরের টানে গতর বিকোনোর নির্লজ্জ আব্দার।


আমি কান পেতে শুনি এ ভরা আকালের অভিমান, মরা নদীর বুকে দাঁত কেলিয়ে হাসে কংক্রিট
প্রতি মৃতের আত্বারা আজ কাঁদে পোড়া-মাটির গন্ধে,পাখির মনও ভালো থাকেনা,
আমি শুনি বাতাসের গায়ে কান পেতে,পাখির গানে কান পেতে,তোমাদের এ সভত্যায় এ কিসের লক্ষন?


আমি তবুও কান পেতে রই তোমাদের বুকে, তোমাদের গ্রাম -শহরের প্রতি স্পন্দনে
আমি বারবার শুনি জীবনের শব যাত্রার গান, কান পেতে!অতি সংগোপনে!