সেকাল একাল
সেই প্রেমিকা এই প্রেমিকা -
বিবর্তিত বাঙালী রমণী আজ কেমন যেন -
না সে প্রাণহারিণী না অভিসারিণী না ছলনাময়ী,
দেবী নয়, নয় অপ্সরী, আজকের রমণী সাধারণ অতি - সাজে বেশে মেজাজে, ব্যাস্ এক মানবী -
নরের তরে আর নয়, সে আজ স্বতন্ত্র স্বাবলম্বী উদ্ধত মস্তকে বলে সে শুধু এক নারী,
আর তাই দুঃখ আজকের কবির, একালের প্রেমিকারা যে একেবারেই কবিতা-বান্ধব নয়।


সেকালে ক্লান্ত কবিকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল সেই এক নাটোরের বনলতা সেন -
সেই সুদূর নাটোরে,
জীবনের পথ সব দুনিয়াম মাড়িয়ে তবেই না দেখা নায়িকার সাথে,
বিমুগ্ধ কবির অন্তর ছন্দে কেঁপেছিল, নয়নো নয়নে কবি গেঁথেছিল গাঁথা,
"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য.যয..তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায়  ছিলেন"?


সেকালের প্রিয়তমাদের চোখে কি যেন ছিল,
চোখসব সন্ধ্যার মায়ামুগ্ধ প্রকৃতির মতোই অব্যক্ত ছিল,
নয়ন মায়াবিনী ছিল -
পরম প্রেমের কেমন এক মায়ায় বাঁধা পড়তো কবি,
নয়নপানে আঁড়ে চেয়ে চেয়ে আকুতিভরা কণ্ঠে বাঁধতো কতনা গীতি,
"বুঝি গো সন্ধ্যার কাছে শিখেছে সন্ধ্যার মায়া
ওই আঁখি দুটি
চাইলে হৃদয়-পানে মরমেতে পড়ে ছায়া,
তারা উঠে ফুটি।"


সেকালে নায়িকাদের চেহারাই যেন মহাকাব্য ছিল,
চেহারা চাহনি চলনের পরতে পরতে পদ্য ছিল,
গাঁথা ছিল বিরহ ব্যথা, সুখ হাসি, প্রেম ঘৃণা সবই,
কবি বুঁদ হয়ে চেয়ে রইতো ওঁর প্রিয়া পানে,
আর প্রেমানন্দে প্রাণবন্ত হতো ওর ছন্দ যত কবিতামালার পংক্তিতে -
"তাহারে আঁকিতাম, রাখিতাম ধরিয়া
বিরহ ছায়াতল সুশীতল করিয়া।
কখনো দেখি যেন ম্লান-হেন মুখখানি,
কখনো আঁখিপুটে হাসি উঠে ভরিয়া।"


সেকালে গুপ্ত প্রেম লীলাময়ী ছিল,
পাপ ছিল,
সেকালের গুপ্ত প্রেমের নায়িকারা সতী ছিল,
রঙেঢঙে মনের দুয়ার বন্ধ রাখায় প্রতিজ্ঞ ছিল,
কবির প্রতি ওদের তাই আকুতি ছিল -
"লুকানো প্রাণের প্রেম পবিত্র সে কত।।
আঁধার হৃদয় তলে মানিকের মতো জ্বলে,
আলোতে দেখায় কালো কলঙ্কের মতো।
ভাঙ্গিয়া দেখিলে ছি ছি নারীর হৃদয়
লাজে-ভয়ে থরথর ভালোবাসা সকাতর
তার লুকাবার ঠাঁই কাড়িলে নিদয়।'


সেকালে কবির আজন্ম সাধনার ধন ছিল ওর প্রিয়া,
মানসসুন্দরী
কবির কবিতা-কল্পনালতা।
প্রমোদ বিহারে মেতে ওঠে কবি স্বপ্নলোকের আহ্বানে,
প্রেমালাপ কবির ছন্দে ছন্দে ওর মানসসুন্দরীর সাথে -
"আজ কোন কাজ নয়-
সব ফেলে দিয়ে ছন্দোবদ্ধ গ্রন্থ হীত,
এসো তুমি প্রিয়ে,
আজন্ম সাধনধন সুন্দরী আমার কবিতা,কল্পনালতা।"