**(সকাল হল / দেখল লোকে / দীঘির জলে উঠেছে ভেসে
কলঙ্কিনী ময়নামতি / লাল চেলিতে / বধূর বেসে | )**
বলল সবাই / কুলটা মাগীর / এমন হবে সেত / জানা ছিলই
রুহান কোথায় হাওয়া হল / জানল না কেউ/ কোন কথাই
কদিন পরে / চাকরি ছড়ে / ঘরে ফিরল ময়নার বর
দিন রাত সে / রয় যে বসে / দীঘির পাড়ে / অতঃপর
কয় না কথা / কাহারো সাথে / কত করে লোক বুঝায় তাকে
সে চুপ থেকে / কি যে ভাবে / বুকে চেপে বুকের ঝড় |
দিন যায় হে দিনের মতন/ সুখে দুঃখে গাঁয়ের যেমন/ ঘুরে গেল বছরভর
হঠাৎ একদিন / বাজিয়ে বাজনা / রুহান ফিরল / নিজের ঘর
সাথে এক নারী / সুন্দর ভারি / বাদা অঞ্চল থেকে আনা বউ
সে করে ব্যাবসা / শ্বশুরের পয়সা / পেয়েছে যে কত / জানে না কেউ
দিল সে দাওয়াত / বড় করে জাঁক / দুটি গাঁ জুড়ে সকলকে
পেট পুরে খেয়ে / এমন গুনের ছেলে / ধন্য ধন্য করে লোকে |
সাঁঝ বেলা বেড়াতে / গেল দঘি পাড়ে / মনে কি ছিল কে জানে
দেখল সে / ঘাটের কাছে / মোহন আছে বসে / শুকনো মুখে ব্যাথা ভরা মনে
রুহান বলে হেসে - দাদা, কি কর গো বসে, দুঃখ করে লাভ কি তুমার
ও মেয়ে ভালো নয়কো মোটে / তোমার যোগ্য কি বটে / কেমন ব্যাভার
একটা গেছে / তাতে কি হয়েছে / চাইলে হাজারখানা / আসবে আবার !
মোহন বলে - জানি রে ভাই / কিন্তু বড় কষ্ট যে পাই /
আমি তাকে ভালোবাসি / এখনো যে
সে যে বড় কষ্টে আছে / রোজ রাতে স্বপ্নে আসে /
কাঁদে নিজে / আর আমাকে কাঁদায় সে ।
একা একা থাকে সে সেথায়, যেথায় তাকে সতায় বড় দুষ্ট ভুতে
আমরা যদি কেউ থাকি তার সাথে, রাখতে পারব হয়ত সুখে তাকে
এই বলে সে হাতে নিল দা , কাঁপল না হাত কাঁপল না পা
এক কোপে সে করল আলাদা, রুহানের ধড় থেকে মাথা ।
রক্তে গেল গাছের তলা ভেসে / হাহা রবে মোহন উঠল হেসে
গাছে বাঁধল ময়নার লাল শাড়ি / ঝুলে পড়ল গলায় তারই ফাঁসে
মরার আগে বলেছিল সে ডেকে / ময়নামতি আসছি তোমার কাছে
তোমার বদলা নেওয়া ছিল বাকি / তাই এতদিন বৃথা নষ্ট গেছে
ময়নার রুহ হয়তো ছিল কাছে, ঝাঁপিয়ে পড়ে নিল সে তাকে বুকে
দমকা হাওয়ায় দুলতে লাগল মোহন, তৃপ্ত হাসি লেগেছিল তার মুখে |
- তারপর ? দাদা তারপর কি হল ?
- তারপর ?
হায়রে কপাল, তার ও আবার পর খুঁজেন
বাড় গেল, জুয়ার গেল, জোষ্টি মাসে পানি মাপেন |
ময়নাদীঘির কালো জলে, হাজার চাঁদের আলো জ্বেলে
মায়নামতি আজও নাইতে আসে
জোছনা গভীর রাতের ফাঁকে দেখতে যদি চাওগো তাকে
এসো চলে ময়নাদীঘির বাঁকে ।
(সমাপ্ত)
-----(১৫/৮/২০১৫)