আজকাল বাবার কথা খুব একটা মনে পড়ে না ,
শৈশব, কৈশোর, যৌবনের শুরু অবধি বাবা কে পেয়েছি ,
তারপর দীর্ঘ সময় বাবা নেই আমাদের মাঝে ;
যতদিন বাবাকে কাছে পেয়েছি জীবনের আদর্শ মেনেছি ,
সবসময় বাবার মত হতে চাইতাম ,
গম্ভীর বুদ্ধিদীপ্ত রাশভারী মানুষ ।
নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় আমরা থাকতাম ,
এলাকার মানুষ বাবাকে বেশ সমীহ করতো ,
বাবা একসময় মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন ,
পরে ব্যবসায়ী হয়ে নিজের পেশা পাল্টে ফেলেন ;
তবুও মানুষ তাকে মাস্টার সাহেব বলে সম্বোধন করতো ,
আর আমরা পরিচিতি পাই মাস্টার সাহেবের ছেলে ।
আমার বাবা জসীম মাস্টার,স্পষ্টভাষী সততা ও বিশ্বস্ত তায়
তিনি ছিলেন সকলের কাছে প্রিয় এক মানুষ ।
বট বৃক্ষের ছায়ার মতই তিনি আমাদের আগলে রাখতেন ,
কোন অন্যায় বা মিথ্যা বললে কঠোর শাস্তি দিতেন ;
কুসংস্কার কখনও বাবাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি ,
যৌবনে ধর্মীয় অনুশাসন প্রতি কিছুটা অনীহা থাকলেও
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা তাকে বদলে দেয় ।
পঁচিশে মার্চের রাতের পাক বাহিনীর নির্মমতার  
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আমার বাবা ,
পাক হানাদার যখন অপারেশন ক্লীন হার্ট শুরু করে
বাবা তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে  
আমাদের ছোট ভাই দুই বছরের শামীমের লাশের পাশে ,
পঁচিশে মার্চের রাত দশটার ছোট ভাইটি মারা যায় ।
সে রাতেই বাবা আমার মা আর  বাবার একজন সহকারী
ভাইটির লাশ নিয়ে কখনও ঠেলা কখনও পায়ে হেটে
নারায়নগঞ্জের বাড়িতে আসেন ।
ঢাকার রাজপথে পাক বাহিনীর নৃশংসতায় বর্ণনা  
সেদিন বাবার মুখে শুনে ভয়ে আমরা শিউরে উঠেছিলাম।
হয়ত আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল বলেই তারা সেদিন
বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছিল ,
আর সেই বিশ্বাস থেকে বাবা বদলে গেলেন ;
ধর্মীয় অনুশানের মাঝে নিজেকে বন্দী করে ফেললেন ,
ব্যবসার প্রতি মনোযোগ কমে গেল ,
ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি । আর এই ঝণের দুশ্চিন্তায়
উনিশ শো তিরাশি সালের এগারই ডিসেম্বর সকাল দশটায়
বাবার স্ট্রোক হয় , ওটাই বাবার জীবনে প্রথম স্ট্রোক
আর তাতেই বাবার জীবন প্রদীপ নিভে গেল ;
আমরা হারালাম আমাদের বট বৃক্ষের ছায়া ।
উনিশ শো তিরাশি থেকে দুই হাজার বাইশ
দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছি , বাবার স্মৃতি , আদর্শ  
নিজে ধারণ করার চেষ্টা করেছি ।
জীবনের এই অপরাহ্ণে আজও বাবাই যেন
আমার চলার পথের দিশারী ।
যদিও কর্ম ব্যস্ততায়
বাবার কথা খুব একটা মনে পড়েনা ।



( স্মৃতির পাতা থেকে )
আজ ১৯শে মার্চ বাবা দিবসে সকল বাবাদের জন্য রইল আমার শুভ কামনা