বিতারিত শয়তান থেকে আল্লার কাছে আশ্রয় চাইছি,
পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লার নামে শুরু করছি ।  

শপথ করছি এই মক্কা নগরের ,               ১
আর আপনি বাসিন্দা সেই নগরের :           ২
শপথ সে জন্মদাতা আদি জনকের              
যিনি জন্ম দিয়েছেন নব প্রজন্মের   ।          ৩
নিশ্চয় আমি মানুষ পয়দা করেছি              
অনেক কষ্ট ক্লেশের মাঝখানে রেখে ,          ৪
সে কি মনে করে কেউ নেই তার চেয়ে        
বেশী ক্ষমতাবান এ দুনিয়ার বুকে ।            ৫
সে বলে, ‘ প্রচুর অর্থ খরচ করেছি '            ৬
সে কি ভাবে কেউ তাকে কভু দেখবেনা ,     ৭
আমি তার দুই চোখ বানিয়ে দেইনি ?         ৮
কিংবা তার জিহবা ও ওষ্ঠ দুই খানা  ।         ৯
পাপ পূন্যের দুখানা পথ দেখিয়েছি ,           ১০
মানুষকে এত গুন দেয়ার পরও                  
ধর্মের দুর্গম গিরি পথে সে আসেনা ,           ১১
ধর্মের দুর্গম পথ কি তুমি  জানোনা ?          ১২
তা হচ্ছে ক্রীতদাসকে চির মুক্তি দানে  ,      ১৩
কিংবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে ,        ১৪
তোমাদের ইয়াতীম আত্মীয়-স্বজনকে ,        ১৫
অথবা ধূলি-মলিন গরীব দুঃখীকে ।             ১৬
অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয় ,              
সত্যিকার অর্থে যারা এনেছে ঈমান;                
উপদেশ দেয় ধৈর্য ও অনুগ্রহের ,                ১৭
তারাই হয়েছে আজ বড় ভাগ্যবান ।             ১৮
হতভাগ্য তারা যারা মানেনা আয়াত             ১৯
অগ্নিকুন্ডে রবে তারা নিত্য দিন রাত ।           ২০

            *******


সূরা আল-বালাদ মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৯০ তম সূরা; এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ২০ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১ , সূরা আল-বালাদ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে । এই সূরাটির প্রথম আয়াত বা বাক্যাংশের আল বালাদ (الْبَلَدِ ) শব্দটি অনুসারে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে;  আল বালাদ শব্দের অর্থ নগরী ।
শানে নুযূল অর্থাৎ অবতরণের কারণ বা পটভূমি :
      বিষয়বস্তু ও লেখনী থেকে ধারণা করা যায় এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ প্রথম সূরাগুলোর একটি , তবে সূরাটিতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যা থেকে মনে হয় এটি এমন এক সময়ে নাযিল হয়েছিল যখন মক্কার অবিশ্বাসী গোষ্ঠীভুক্ত মানুষেরা মুহাম্মদের ( দঃ )বিরুদ্ধে তাদের বিরোধ ঘোষণা করেছিল এবং তার উপর অত্যাচার করাকে আইণতঃ সিদ্ধ বলে স্থাপন করে নিয়েছিল।
বিষয়বস্তুর বিবরণ
তাফসির কারিগনের বর্ণনা মতে, এই সুরার মূল উদ্দেশ্য পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া। আর এ কথা জানানো যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষের সামনে ভালো ও খারাপ দুই পথের দিশা দেখিয়েছেন এবং কোন পথটি সঠিক এবং অনুসরণীয় সেটি বিবেচনা করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। এখন এটি মানুষের সিদ্ধান্ত যে সে কোন পথটি বেছে নেবে। সে কি সৎকর্ম করে প্রকৃত সুখী হবে নাকি অপকর্মে লিপ্ত হয়ে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হবে।

প্রথমত যেই মক্কায় মক্কাবাসীদের দ্বারা মুহম্মদ ( দঃ )সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, সেই মক্কাকে সত্যের সাক্ষী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই পৃথিবী মানুষের জন্য বিশ্রাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা নয়, যেখানে মানুষ আনন্দ-উল্লাসপূর্ণ জীবনযাপন করবে। বরং তিনি মানুষকে কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যদি এই কথাটি সূরা নাজমের ৩৯ নম্বর আয়াতেও রয়েছে (লাইসা লিল ইনসানি ইল্লা মা সা'আ ---আর এই যে মানুষের জন্য কিছুই থাকবে না যার জন্য সে চেষ্টা না করে)। এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই পৃথিবীতে মানুষের ভবিষ্যত তার পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে।