সূরা আত তাকভীর


বিতারিত শয়তান থেকে আল্লার কাছে আশ্রয় চাইছি,
পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লার নামে শুরু করছি ।  


যখন সূর্যকে আলোহীন করা হবে,
যখন নক্ষত্র রা মলিন হয়ে যাবে;
যখন পর্বতমালা হবে অপসারিত ,
যখন পূর্ণ-গর্ভা উষ্ট্রী হবে উপেক্ষিত ।


যখন বন্য পশুরা একত্রিত  হবে,
সমুদ্রকে উত্তাল করে দেয়া হবে
যখন আত্মাসমূহকে তার নিজ নিজ
দেহখাচায় প্রতিস্থাপন করা হবে ।


যখন জীবন্ত সমধিস্থ কন্যাকে কি অপরাধে
হত্য করা হল , প্রশ্ন করা হবে ?
যখন মানুষের আমলনামা খোলা হবে,
আকাশের আবরণ অপসারিত হবে ।


যখন জাহান্নামের অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে ,
এবং যখন জান্নাত অতি নিকটে এসে যাবে ।


তখন প্রত্যেকেই জেনে নিবে
সে কি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ,
আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলোর
যারা পশ্চাতে সরে এসেছে ।


যে গুলো ফিরে আসে আর অদৃশ্য রয়
শপথ রাতের যখন তা বিদায় হয় ,
এবং ভোরের যখন তার আবির্ভাব হয়
এটা কোন বাণী বাহকের কথা নিশ্চয় ।


যিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ আর শক্তিশালী,
আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী ।


সবার মান্যবর, সেখানকার বিশ্বাসভাজন ,
এবং তোমাদের সাথী পাগল নন ;
তিনি প্রকাশ্য দিগন্ত দেখেছেন যেখানে
সেই ফেরেশতা আবির্ভুত হন ।


তিনিই হলেন সেই বাণী বাহক ফেরেশতা
যিনি অদৃশ্য বিষয় বলেন নির্দিধায় ,  
যা বিতাড়িত শয়তানের উক্তি নয় ,
অতএব, তোমাদের গন্তব্য কোথায় ?  


এটা তো  বিশ্বাবাসীর জন্যে উপদেশ, তবে তা
তার জন্যে যে সোজা চলতে চায় ,
আর তোমরা  কিছুই ইচ্ছা করতে পার না
যা নয় মহান আল্লাহ্ র অভিপ্রায় ।


                ********


সূরা আত-তাকভীর‌ (আরবি ভাষায়: التكوير) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৮১ তম   সূরা, এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ২৯; এর রূকু তথা অনুচ্ছেদ ১ টি। সূরা আত-তাকভীর‌ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
নামকরণ
সূরার প্রথম বাক্যের  আরবী কুওভিরাত  শব্দটি থেকে নামকরণ করা হয়েছে। কুওভিরাত মানে হচ্ছে , গুটিয়ে ফেলা হয়েছে । গুটিয়ে ফেলার  মূল শব্দ  হচ্ছে তাকভীর । তা থেকে অতীত কালের কর্তৃবাচ্য অর্থে কুওভিরাত ( আরবী ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।  এই নামকরণের অর্থ হচ্ছে , এটি সেই সূরা যার মধ্যে গুটিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে।


নাযিলের সময় –কাল
বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী থেকে পরিস্কারভাবে জানা যায় , এটি মক্কা মু’আযযমার প্রথম যুগের নাযিল হওয়া সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত।
বিষয়বস্তু ও মুল বক্তব্য
এর বিষয়বস্তু হচ্ছে দু’টি : আখেরাত ও রিসালাত।
প্রথম ছ’টি আয়াতে কিয়ামতের প্রথম পর্বের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে : যখন সূর্য আলোহীন হয়ে পড়বে। তারকারা স্থানচ্যুত হয়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হবে । পাহাড়গুলো পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে উৎপাদিত হয়ে শূন্যে উড়তে থাকবে। মানুষ তাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের কথা ভুলে যাবে। বনের পশুরা আতংকিত ও দিশেহারা হয়ে সব এক জায়গায় জড়ো হয়ে যাবে। সমুদ্র স্ফীত হবে ও জ্বলে উঠবে। পরবর্তী সাতটি আয়াতে কিয়ামতের দ্বিতীয় পর্বের উল্লেখ করে বলা হয়েছে : যখন রূহগুলোকে আবার নতুন করে শরীরের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হবে। আমলনামা খুলে দেয়া হবে। অপরাধের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আকাশের সমস্ত পরদা সরে যাবে। এবং জান্নাত – জাহান্নাম ইত্যাদি সব জিনিসই চোখের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে । আখেরাতের এই ধরনের একটি পুরোপুরি ছবি আঁকার পর একথা বলে মানুষকে চিন্তা করার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে যে , সে সময় প্রত্যেক ব্যক্তি কি পাথেয় সংগ্রহ করে এনেছে তা সে নিজেই জানতে পারবে।


এরপর রিসালাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এ ক্ষেত্রে মক্কাবাসীদেরকে বলা হয়েছে , মুহাম্ম্‌দ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের সামনে যা কিছু পেশ করছেন সেগুলো কোন পাগলের প্রলাপ নয়। কোন শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও বিভ্রান্তিও নয় । বরং সেগুলো আল্লাহর প্রেরিত একজন উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন বুযর্গ ও বিশ্বস্ত বাণীবাহকের বিবৃতি , যাঁকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উন্মুক্ত আকাশের দিগন্তে দিনের উজ্জ্বল আলোয় নিজের চোখে দেখেছেন । এই শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তোমরা কোন দিকে চলে যাচ্ছো?