অটল বাবু পটল তুলে-
এই জগতের মায়া ভুলে;
রওনা হলেন স্বর্গের পথে,
জীবনের পুণ্যফলের রথে।

একই সাথে ছক্কা মিয়া
অকস্মাৎ অক্কা পাইয়া-
ছুটলেন জান্নাতের পথে,
অর্জিত সওয়াবের রথে।

টিকি আর টুপিধারী দু’জন
ছিলেন ধরায় মস্ত সুজন,
আজীবন এদের বন্ধুত্ব ভাব,
সম্প্রীতিতে ঘটায়নি প্রভাব।

একই গ্রামে ছিল দুহের বাস
দূরত্ব গড়ার পায়নি অবকাশ,
এরা বন্ধুত্বের মূর্তমান আধার
অন্তর দুহের ছিল পরিষ্কার।

দুই বন্ধুর নিখাঁদ সাদা মনে,
দাগ লাগাতে কত দুর্জনে-
কতদিন করেছে কত ছল;
চেষ্টা তাদের হয়নি সফল।

এমনি করে সাচ্চা বন্ধু বেশে
শত্রুদের সব ষড়যন্ত্র নেশে,
দুই বন্ধুর কেটেছে দিনকাল;
কুচক্রী মনে জাগিয়ে ধূম্রজাল।

অবশেষে একই দিনক্ষণে
বিস্ময় জাগিয়ে সবার মনে;
সংসারের মায়া মোহ ছেড়ে,
দুই বন্ধু চললেন পরপারে।

এদের অকাল বিয়োগ ব্যথা,
জাগিয়েছে ঘোর কাতরতা
হৃদয় সবার করেছে জখম,
গ্রামে তাই শোকের মাতম!

বলছে সবাই বন্ধু তারা বটে-
নইলে কি আর এমনটা ঘটে?
এ বন্ধুত্ব নয় এককালের তরে,
বন্ধুত্ব তাদের দুই কাল জুড়ে।

ইহ জগতের লীলা সাঙ্গ করি-
ও পাড়ে দিয়েছে তারা পাড়ি;
মহামিলনের তরে এ যাত্রারথ,
কে রুধিবে তাদের যাত্রাপথ?

জগতে ভালো মানুষের তরে,
ভালোবাসা আপনি ঝরে পড়ে;
ভালোত্বের এ মুখ্য পুরস্কার-
দুর্জনের নাই সেই অধিকার।

মানবতায় ভরপুর এই দুইজন-
সতত ধরেছে মনে মঙ্গল চিন্তন,
হিংসাশূন্য জীবনে ছিল সদাচার;
তাইতো খুলে গেছে স্বর্গের দ্বার।

স্বর্গের যাত্রাপথ সাধারণ সে নয়
দিব্য আলোকপূর্ণ সে পথ চিন্ময়।
এ পথ পাড়ি দিলে বৈতরণী ঘাট
সেই ঘাট পেরোলেই স্বর্গের হাট।

বৈতরণী ঘাটে অটল বাবু নেমে;
তাকিয়ে দেখছিলেন ডানে-বামে,
সামনে পিছনে সংখ্যাতীত লোক;
এরই মাঝে আটকাল তার চোখ!

বন্ধু ছক্কা হেথা লোকেদের ভীরে
খেয়ার অপেক্ষায় বৈতরণী তীরে,
বিস্ময়ে শুধান, তুমি কেন এলে;
আমার পিছু পিছু সংসার ফেলে?
বন্ধু কহে, একা তুমি যাবে স্বর্গধাম
মানতে পারিনি; তাইতো এলাম।
দুই বন্ধু মিলে মিশে থাকব ওপারে,
আমাদের বন্ধন কে আলাদা করে?

বন্ধুরে অটল কন রসিকতার ছলে;
জান্নাত ছাড়ি কেন স্বর্গপথে এলে?
নয় কি জান্নাত এ কহে ছক্কা মিয়া
সারথি আমায় যে এল হেথা নিয়া।

তখন ঘাটে এসে ভিড়ল খেয়া তরী
মাঝি কন আমি এ ঘাটের কাণ্ডারী।
নিত্য সবেরে আমি করে দেই পার,
সুখময় স্বর্গধাম এ নদীর ওপার।

চেয়ে দেখো ওপারে- অতি মনোরম,
শোভিতেছে সুখপুরী সেযে দিব্যধাম;
ওটাই স্বর্গ, কিংবা বেহেশত-জান্নাত
এর লাগি মানুষের যত মোনাজাত।

ওই পুণ্য স্থান শুধু তোমাদের তরে
নির্ধারিত; জগতের পুণ্যের জোরে।
রয়েছে সবার সেথা সুখের অবাস,
সকলে সেথা গিয়ে সুখে কর বাস।