আমার গতরে কি শক্তি কম ছিলো?
আমার হাতে, শিরা-উপশিরায় কতো মদ্দ পোলাপান ঝুলেছে!
আজ কে রাখে তার খবর! আফসোস!
একদিন আমিও ছিলাম রূপবান, টনটনে চামড়া
পটলচেরা চোখ, আর যৌবন! নাইবা বললাম!


আজ, শরীরের ভাজে ভাজে জমে আছে নোংরা জল
ক্ষয়ে যাচ্ছে হাড্ডি, ঝুলে পড়েছে শিরা-উপশিরা
ক্ষত-বিক্ষত দেহ, কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে পঙ্গপালের দল
পালা বদলের দিন বুঝি আজ শেষ!


একদিন আমারো ছিলো-
রমনার বিশাল বক্ষে আমি দেখেছি
৪৭,৫২, ৬৯ এব্ং ৭১ এর বিভীষিকাময় দিনগুলি!
দেখেছি নরকের উল্লাস, পিচাশের অট্টহাসি, রক্তপিপাসু চোখ
ক্ষতবিক্ষত নারী আর রক্তগঙ্গা!
আমি চোখ বুঝতে চেয়েছি, কিন্তু বিশ্বাস করো
আমার হাজার পাতা থাকলেও চোখের কোন পাতা ছিলো না।
আমার গায়ে বাঁধা ছিলো পাঁচ পাঁচটি কলেজ পড়ুয়া তরুনী;
পাশে পড়ে ছিলো বই,খাতা,কলম;
পরনে ছিলো না কোন বস্ত্র!
দুঃখের অশ্রুতে ঝড়ে যাওয়া পাতায় ঢেকে দিয়েছিলাম চিরশয্যায়!
আজও আমার কান্না থেমে আছে!


আমি দেখেছি ভালোবাসা-
ভালোবাসে কাছে আসে, হাতে হাত, আড়ষ্ঠতায় দুটি তাজা প্রাণ,
বেহিসেবি সময়, ঘন্টার পর ঘন্টা, আবছা আলোয়,
অবশেষে তৃপ্ত  হয়ে ঘরে ফেরা।


আমি দেখেছি-
ভিক্ষাবৃত্তি, পুলিশের বাড়াবাড়ি, মারামারি, কাটাকাটি
চা-বিক্রেতার তৃপ্তির হাসি
বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বেঁচে থাকার আদম্য বাসনা;
ডা্ষ্টবিনের কাক, তীর্থের কাক, কামুক পুরুষ
সন্ধ্যামালতী! রং-বেরঙ্গে, ফুলে ফুলে!


আমি দেখেছি-
পানি হাতে,মালা হাতে কিশোরী,
চকলেটের লোভ যে বয়সে হাতছানি দিয়ে ডাকে;
চকলেট হাতে কামুক জানোয়ার,
গাছের আড়ালে ক্ষুধা নিবারণ! নিথর দেহ,
ছিটকে দুরে পড়ে থাকা পানির মগ!
না, আর বলতে পারছি না,
আমি আজ বাকরুদ্ধ!
নীরব দর্শক মাত্র।


আজ, আমার নেই রূপ, নেই গন্ধ!
আমি আজ চলেছি শ্মশানঘাটের দিকে!
একদিন ফিরব কয়লা হয়ে
তোমাদের ঘরে!


০৮/২৮/২০১৩