ভুলতে যে পারিনি
সুব্রত নন্দী


চলতে চলতে বেশ কয়েকটা বছর
কাটিয়ে দিলে নিজেকে নিয়ে,
একান্তই নিজের জগতের মাঝে।
হয়তো আমাকে আর মনে পড়ে না তোমার?
তোমাকে সকাল সাঁঝে এখনও তোমায় আঁকি কল্পলোকে।


কি করে ভুলি বলো?
কত স্মৃতিতে মেশা গোপন কথা,
কত অজান্তের বেহিসেবি সত্যতা!


ফেলে আসা রঙিন দিনলিপি,
রেখে যাওয়া ক্যানভাসের ছবি,
সবই আছে স্মৃতিতে জলছবি হয়ে,
আজও সযত্নে সাজিয়ে রেখেছি গোপনে।


জানি এখন তুমি বড্ড ব্যস্ত অন্যের ঘরে,
হয়তো ভুলে গেছো নবজীবনের হাত ধরে।


হয়তো আজ আর অশ্রুসজলে গাল ভেজাও না,
ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে অন্তরালের অভিমানও বোঝাও না।


দুটি মনের সান্ত্বনা বিনিময় বিলুপ্ত হয়েছে বহুদিন হল,
নব দিগন্তের ধুমকেতু ঢেকেছে পুরাতনী  ছত্রচ্ছায়ার অস্তিত্ব!


মনের পড়ে সেই সঙ্গোপনের নিবিড়তা,
কতো দিন সূর্যাস্ত কেটেছে বাবুঘাটে আড়ষ্টতায়!


এখনও সেই অভিমানী চোখে তাকাও?
ভালোবাসার মায়াজালে অন্যকে ভাসাও!


তোমার মুক্তধারার হাসিটি কী সমুজ্জ্বল!
আজও আমি দ্বিধান্বিত কোনটা আসল?


তোমার মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা হয় আগের মতো?
আলতো হাতে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়?


এখন সেই ঠান্ডায় কাতর হওয়ার ধাতটা আছে?
কোনো গরম হাতের মাত্রাতিরিক্ত ছোঁয়া কী পাও কাছে!


সেই প্রাণোচ্ছল উন্মাদনার মনটি রাখতে পেরেছ?
তুমি কী  সত্যিই সুখী হতে পেরেছ অন্যের ভালোবাসায়!


জানি, আমি আজ কোনো উত্তর পাবো না,
জানি তুমিও আর ফিরে আসবে  না।


কি করি বলো?
মন থেকে ভুলতে যে পারিনি?
শিখিনি কোনো মেকি অভিনয়,
শিখিনি কোনো নকল অভিসার!


ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ কী?
কেন মানুষ প্রেমে পড়ে?
আজও বুঝতে পারি নি,
তবে এইটুকু স্মৃতির ডাইরিতে বুঝি,
তুমি এখনও আমার মনের ঠিকানা।


বড্ড নিস্পাপ কোমল ছিলে তুমি,
সবাইকে নিজের মতো ভাবতে,
রঙিন প্রজাপতির স্বপ্ন দেখাতে সর্বক্ষণ,
নীল আকাশে ডানা মেলতে চাইতে,
বাস্তবের খাতায় অসমাপ্ত ইতিহাস!
আমি কিন্তু তোমার ডানা কাটতে চাইনি,
শুধু তোমার সাথে উড়তে চেয়েছিলাম,
সারাটি জীবন একসাথে কাটানোর অঙ্গীকার করেছিলাম।


ভাল বাসার খোঁজে ভালোবাসাকেই ভুলে গেলে,
জানিনা অর্থের ভালোলাগায় কী পেলে?


মনের পড়ে তোমার অঙ্কের হিসাব মেলানোর খেলা,
হিসাব মেলেনি কোনোদিনই,
কেটে গেছে প্রেমের স্নিগ্ধ স্পর্শে সারাটি বেলা।


তুমি ভালো বাসতে সাপলুডুর খেলা।
পছন্দ করতে সিঁড়ির উপর তরতরিয়ে উঠতে!
আমি ভয় পেতাম সাপের মুখে না পড়ে যাও!
তাহলে যে বিষের গরলে ডুববে ভালোবাসার মেল-বন্ধন।


তাই অজান্তেই আনমনে ডাকতাম ঈশ্বরকে,
তোমাকে হারনোর ভয়ে ঈশ্বর প্রেমী হয়েছিলাম!


কোনোদিন যেন সিঁড়ি ভাঙ্গার অঙ্ক কষতে না হয়!
কিন্তু শেষমেশ অঙ্কের উত্তরে সব গরমিল।


তোমাকে তো ভালোবেসেছিলাম
মনে প্রাণে,
একান্ত নিজস্বতায় চেয়েছিলাম প্রতিটি ক্ষণে।


জানি সেই সুযোগ আমি আর পাবোনা,
সেই সোনালী দিনও আর ফিরে আসবে না।


কি করি বলো?
ভুলতে যে পারিনি যে মন থেকে।


তুমি যে আজও আমার অন্তঃপুরবাসিনী।
তোমাকে এতটুকুও কোনোদিন ভুলিনি।


বয়স বেড়েছে, কিন্তু তুমি যে বাড় নি!
এখনও মনের দর্পণে একই হয়ে আছো।