এই তোমারা কি আমায় চিনতে পেরেছো !!
আমি সেই বীরঙ্গনা জননী,
সেই ভয়াবহ কাল রাত্রিতে কষ্টের স্রোতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো,
আমার এমন মোলায়েম তুলতুলে দেহ ,কোলে তিন বছরের খোকা,
অন্তঃস্বত্তা আট মাসের,কালো কষ্টের দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায় আমাকে
ক্ষত-বিক্ষত করেছিলো পাক ক্যাম্পে রাতের পর রাত ,
আগুনের ছাই এ আমায় পুড়িয়ে তারা উৎসবের আমেজে নেচেছিলো
আমার অচিন কষ্টে, তাদের বিশৃঙ্খল উল্লাসের  ভিড়ে ।
কত চিৎকার করে বলেছি ,
'আমায় এক ফোঁটা বিষ দে মরে বাঁচি'
হুঙ্কারে ছুটে আসে ফের পালা বদলের খেলা ,পাক বাহিনীর তান্ডব লীলা,
একের পর এক আমায় অবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে আমার নারী সত্ত্বাকে ।
আমি বিহ্বল বিমূঢ় চিত্তে লাঞ্চনার মাহীন তাড়নায় নিঃশব্দে নিথর,
দেহ পড়ে আছি ঘরের এক কোণে নগ্ন, বেশে,
আমার বসন খানিও কেড়ে নিয়েছিলো সেই লাপাত্তা বাহিনী,
উপ!! সে কি কঠিন অন্ধকারে ক্ষীণ আলোর স্তব্ধতা,
যদি আমি আমার নিজেকে নিঃশ্বেষ করে ফেলি!!
তাহলে তাদের ভোগের সামগ্রী আর কি-ই বা থাকলো ,
আমার ঠোঁটে আহরণ করতো তাদের দুর্বোধঃপিপাসু লালসা,
কানে বাজে চৌদিকে আরো কত নারীর অত্যাচারের চিৎকার ।
কত চিৎকার করে বলেছি
'ওরে আমায় তোরা মুক্তি দে আমার খোকার কাছে যাবো,
না হয় আমায় মুক্তি দে এই পৃথিবী  থেকে'
নিষ্ফল আকুতি আমার তাদের হাসির খোরাক।
আত্মবিসর্জনের পথ খুঁজে ও পাই নি কোন সাঁকো
নিষ্ঠুর যন্ত্রণার ছোবলে আমি নিথর,নিস্তব্দ,
এক সাথে দু'-দু'টি প্রাণ,অগ্নিবর্ষী গ্রীষ্মের মাঠে ধূসর রঙের ধুলোয়
লুটিয়ে পড়লো,এক কলি থেকে ফুল ফোটার আগে ।


রচনা
৩।১২।২০১৩