এমন করে ঠিক ভাবো


সুধীর দাস


এমন করে ঠিক ভাবো‌ যেমন করে পাবো
যেমন করে তোমার কাছে শিহরণে যাবো
বুকের নদী উথাল পাথাল কান্না ভরা চোখ
যন্ত্রনাতে পাবো তোমার সুরের ছায়া ‌লোক।


আয়নার সামনে চেয়ে দেখো যাকে আমি ভাবি
সে‌ যে আমার ভালোবাসা সুখের ঘরের চাবি
আনমনাতে মনমরা যখন চুপটি করে থাকো
হিসাব করে দেখো তুমি কার ছবিটি‌ আঁকো।


আটকে থাকো ভালোবাসা চোখের জলে ভিজে
আঁকতে থাকো প্রেমের ছবি বুকের মাঝে নিজে
কি হচ্ছে কি হলো আজ বুঝাই কেমনে বলো
বলতে কথা নীরবতায়‌‌ চোখ যে‌ ছলোছলো।


কত সুরের বাজনা বাজে আমার মনে প্রানে
দূর আকাশের ছায়া পথে সুরের ছায়া গানে
কেউ জানে না তুমি জানো জানে তোমার মনে
প্রদীপ জ্বলে আমায় নিয়ে শুধুই ক্ষণে ক্ষণে।


কি হতে আজ কি হলো মনের বনে আগুন
ঝরাপাতার শূন্য বনে পলাশ ফোটে ফাগুন
মন যমুনায় শূন্য হৃদয় কলসি ভরে জলে
তোমায় শুধু মনে পড়ে  হৃদ গহনের তলে।


কোলকাতা
রাত-১২,৪৫
১৪,০১,২১


নক্ষত্রের আরশিতে আমার প্রতিচ্ছবি দেখি


সুধীর দাস


নক্ষত্রের আরশিতে আমার প্রতিচ্ছবি দেখি
ঘুমহীন চোখ, রক্তাক্ত হৃদয় পাঁজর
হাড্ডিসার দেহ, ক্ষুধার্ত পেট
প্রতারণায় ঝলসে যাওয়া ভালোবাসার হৃদপিণ্ড এবড়ো থেবড়ো কর্দমাক্ত ক্লেদ।


প্রতিদিন দেবী বলে যাকে পূজা করতাম বুকের পাঁজরের রক্তাক্ত ফুল দিয়ে
সে আজ হারিয়ে গেছে
ছাই ভস্ম পড়ে আছে
শূন্য বুকের ময়দানে।


ঈশ্বর বলে যে বারবার প্রার্থনা করত
আমার বুকের চৌকাঠে
সে আজ নেই, ঈশ্বর আজ মৃত তার কাছে।


জ্যোৎস্নার ফুল গুলো কালো কালো মনে হয়
অপেক্ষার শ্রাবণ ঘন দীঘল কালো রাত্রি
নিরন্ন ঘর, হাড়ি শুন্য, ক্ষুধার্ত পেট।


একটা অবসন্ন ক্লান্তি, ঘুমহীন চোখ
ব্যর্থতা দুঃখ বেদনার আর্তি
শোকের দলা দলা রক্ত
রুটির ময়দানে চোখের জলে ভিজে যায়।


বেঁচে থাকা দায় সেই কবে থেকে
তবু তো বেঁচে ছিলাম, এখনো বেঁচে আছি
প্রতিদিন ল্যাম্পপোস্টে দাঁড়িয়ে
চাঁদের আকাশের দিকে তাকিয়ে
এক টুকরো রুটি ভিক্ষা করি।


ল্যাম্পোষ্টের কখনো বাতি জ্বলে না
অন্ধকারে চোখ হাতরাই
ইঁদুর পোকামাকড়ের সাথে ঘর করি
কয়েকটি নেড়ি  কুকুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে
তারাও তো আমার মত অভুক্ত
বেঁচে থাকার প্রাণের স্পন্দন বেড়ে যায়।


মেধা-মননের সান্তনা খুঁজি
আমার দলটা আসলে অনেক ভারী
এইতো পড়ে আছে ল্যাম্পোস্টের নিচে।


ইঁদুর আরশোলা টিঁকটিঁকি কতগুলো নেড়ি কুকুর
আমার নিত্য বেঁচে থাকার অভুক্ত সঙ্গী।


সবকিছু আমার হারিয়ে গেছে
বিত্তবাসনা ঘরবাড়ি বৈভব, প্রিয়তমা মানবী
শোকে পাথর বুক,চোখের জল লবণাক্ত।


নক্ষত্রের আরশিতে আমার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে
চোখ কোটর গত, পাঁজর রক্তাক্ত
হাড্ডিসার বুক,
এলোমেলো আলুথালু জীবনের সত্তা
এভাবে বেঁচে আছি
এভাবেই বেঁচে থাকব কয়েকটা দিন বন্ধু
তারপর একদিন বিদায়
চাঁদের  আরশিতে হয়তো আর কোনদিন
দেখা হবে না আমার অভুক্ত মুখ!


কোলকাতা
20,08,20


রাত জ্যোৎস্না মাখে রূপালী চাঁদের


সুধীর দাস


ঘুমন্ত রাত জ্যোৎস্না মাখে রূপালী চাঁদের
পদ্ম দীঘির জলে ডাহুকের জলকেলি
ঝিকিমিকি আলো ছড়ায়
কবির কবিতা নির্ঘুম থাকে
কবিতা হাতছানি দিয়ে ডাকে কবিকে
নির্ঝরের স্বপ্নে জেগে ওঠে রবীন্দ্রনাথ।


নজরুলের ভাঙার গান
লাঙ্গলের ফলার মতো ধুমকেতু ছোটে
বিষের বাঁশি বাজে দোলন চাঁপা বনে
বাগিচার বুলবুলি ঘুমিয়ে যায়
ব্যথার দানে ঝরে পড়ে মৃত্যুক্ষুধা।


সোনার তরী থেকে কে যেন ডাকে
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে একলা চলো রে!


বিষাদসিন্ধু ফোরাত নদীর তীরে কায়কোবাদ জেগে ওঠে মহাশ্মশানের অগ্নি চুল্লিতে
বিদ্যাসাগর দামোদর সাঁতরে চলে যায়
মাতৃভূমি অবাক তাকিয়ে থাকে
সুভাষ বোস হারিয়ে যায়
বিবেকানন্দের চোখে জল
ফাঁসির দড়িতে বীর ক্ষুদিরাম


তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা রক্তাক্ত হয়
ঝাঁসির রানী হুংকার দিয়ে ওঠে
মাস্টারদা সূর্যসেন নির্বাক তাকিয়ে
রেললাইনের পাশে
বিনয় বাদল দীনেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।


নেলসন ম্যান্ডেলা চে গুয়েভারা
বিপ্লবের গান শোনায়
পাবলো নেরুদা খনি থেকে খনিতে
কবিতার কয়লা তোলে
আমাদের বুদ্ধিজীবীরা রেডিও-টিভিতে ভাষণ ছড়ায়
অস্ট্রলজিস্ট এর বিজ্ঞাপনে দেশের ভবিষ্যৎ লেখে


ক্ষুধার্ত মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকে
ময়দানের নেতাদের মিছিল
ভাত চাই কাপড় চাই বাঁচার মত বাঁচতে চাই
কাস্তে কোদাল লাল নিশান হাতে
কৃষকরা আত্মহত্যা করে
চা বাগানের ক্ষুধার্ত মানুষের লড়াই
হাজার হাজার শিল্প কারখানা বন্ধ
শিক্ষিত বেকার ধুকপুক করে
মায়ের অসুখ বাবার বাতের ব্যথা ঘরে ষোড়শী বোন


এনজিওর কিস্তি ,লক্ষ লক্ষ টাকার হিসাব
ঘরে চাল বাড়ন্ত
বাজারে হাহাকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
ঘরের শূন্য হাঁড়ি পকেট খালি
তেল চিটচিটে দেহ
ছেঁড়া বুট পাজামা
পান্তা ভাতে নুন নেই
কাঁচা লঙ্কার ঝাল
চোখ মুখ অন্ধকার।


একজন ক্ষুধার্ত কবি প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে
দু'মুঠো ভাতের
মানবতা কাঁদে, দেশ কাঁদে।


মাতৃভূমির চোখে জল
ধর্মের বিভেদ
ক্ষমতার লড়াই।


তুমি আমি সে ক্যাবলাকান্ত নির্বাক তাকিয়ে থাকি
রাত শুধু চাঁদের জ্যোৎস্না মাখে অনন্তকাল।


কোলকাতা
24,08,20


চাঁদ বলেছিল জ্যোৎস্না দেবে


সুধীর দাস


চাঁদ বলেছিল জ্যোৎস্না দিবে
নিরন্ন শিশুর মুখে দেবে বলেছিল রুটির স্বাদ
ল্যাম্পোষ্টের দাঁড়িয়ে আজও
অর্ধ-উলঙ্গ শিশুটি
ক্ষুধার্ত হাহাকারে তাকিয়ে থাকে
দূর আকাশের দিকে!


চাঁদের মিনার ছুঁয়ে যায় নক্ষত্র
সন্ধ্যাতারা বিলীন হয়ে আবার
পশ্চিম আকাশে উঠে শুকতারা
অথচ তখনও তাকিয়ে থাকে
ঐ সেই  অর্ধ-উলঙ্গ শিশুটি
বুক তার মিশে গেছে


পাঁজরের হাড়ে।


চোখ তার ডুবে গেছে চোখের গর্তের ভেতরে
হাড্ডিসার দেহ
নির্লিপ্ত আঁখি
কণ্ঠস্বর অস্পষ্ট
রোগাক্লিষ্ট মা পাশে ঘুমিয়ে আছে
অভুক্ত হাহাকারে তারও নুব্জ শরীর
ছিন্নভিন্ন ছেঁড়াখোঁড়া বসন
দুর্ভিক্ষ পীড়িত ম্যাডোনা!


আমাদের চাঁদ মামা আজ রেশন চুরি করে
ভূখা মানুষের লাইনে লাঠি দিয়ে ল্যাং মারে
বাটখারা দাঁড়িপাল্লা ওজনে কম
চাঁদ মামার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে


নক্ষত্র জ্যোতিষ্ক
দেশ বাঁচানোর মহারথী দেশ প্রেমিক!
ভুখা ল্যাংড়া মানুষ চিরদিন অভুক্ত থাকে।


চাঁদমামা বলেছিল রুটি দিবে
অধরা চাঁদ চিরদিন নক্ষত্রে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে।


কোলকাতা
18,08,20