কতদিন তোমাদের কবিতা পড়িনা হে কবি


সুধীর দাস


কতদিন তোমাদের কবিতা পড়িনা হে কবি
আমার আত্মার বুদ বুদ আজ ভ্যাবসা গন্ধময়
বুকের সব নক্ষত্র পুঞ্জ ছায়াপথ মুমূর্ষ মলিন


চোখের জ্যোতিষ্কময় জ্যোতি ম্লান ‌ধূসর
কাঁটাতারে বুকের অবয়ব জুড়ে
পেরেক ঠুকে গেছে
পাঁজর খুবলে রক্ত জমাট বেঁধে আছে নিরন্তর অবিনশ্বর।


কবিতার সেই সব আকাশছোঁয়া প্রান্ত আজ
মেঘে ঢাকা তারা
বসন্ত চলে গেছে দিগন্তের সাহারায়
তপ্ত বালুময় গোধূলিতে আমি এক ‌নিস্তব্ধ কবি
বড় একা নিঃসঙ্গ কাটে আমার দুর্বিষহ জীবন।


কবিতার বঙ্গভূমি হে আমার স্বদেশ
তোমার কোলে মাথা রেখে যদি আর একটিবার শুধু একটিবার মাথা রেখে ঘুমাতে পারতাম!


শাহবাগ চত্বরে বাংলা একাডেমির প্রান্তসীমায়
শহীদ মিনারের কোল ঘেঁষে জীবনের গান গেয়ে
বিউটি বোর্ডিং চত্বর ঘুরে বাংলাবাজার
প্যারিদাস রোড পুথিঘর লিমিটেড
আমার ভালোবাসার ঠিকানা।


তারপরে নীলক্ষেত কাটাবন নিউ মার্কেট
ঘুরে ঘুরে পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণ
চন্দ্রিমা উদ্যান রেসকোর্স ময়দান পুরানা পল্টন প্রেসক্লাব ঘুরেফিরে
আবার সেই কবিতার আড্ডা বিউটি বোর্ডিং।


কবিতার ‌খো৺জে রায়ের বাজার বধ্যভূমি
মিরপুরের গণকবর
সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
সাভারের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ
টিএসসির অপরাজেয় বাংলা
ধানমন্ডিতে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্তাক্ত পঁচাত্তরের জীবন্ত লাশ, জাদুঘর
আমার প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশ।


কবিতার খোঁজে  কবিতার ভালোবাসায়
আমার আবার ইচ্ছা হয় চাঁদ ফুল নক্ষত্রে তারা  হতে।


কতদিন তোমাদের কবিতা পড়িনা হে কবি


নাগরিক কবি শামসুর রাহমান
নক্ষত্রের ফুল ছড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে সেই কবে নক্ষত্রের দেশে।


ফয়েজ আহমেদ, কাইসুল হক ,আলম তালুকদার
মারুফ চিনুকে যতবার খুঁজে ফিরি
তোমাদের ঠিকানা নেই
তোমাদের আকাশ ওপারের আকাশে।


"দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী" আমি অপেক্ষা করি
নির্মলেন্দু গুণ তোমাকে
ম বর্ণের সাইনবোর্ড নিয়ে তোমাকে খুঁজি
আমার প্রিয় কবি অসীম সাহা।


রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কাছে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখি
আবু হেনা মোস্তফা কামাল
"সব কটা জানালা খুলে দাও"
আবার ফিরে আসি তেপান্তরের মাঠ ঘুরে
মধ্যরাতের পদ্য লিখব
প্রিয় ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন তোমাকে নিয়ে।


বিতাড়িত প্রবাসী কবি দাউদ হায়দারের "জন্মই আমার আজন্ম পাপ"নিয়ে
যদি আবার, যদি আর একটিবার
স্বদেশের বুকে আমার পদধ্বনি বেজে উঠত
দ্বিতীয়বার আবার আমি "রাজাকার খ্যাদাও"
অঙ্গীকার নিয়ে শাহবাগের ময়দানে মিছিলে মিছিলে ভরে দিতাম আকাশ বাতাস।


জিয়া হায়দার, খালেদা এদিব চৌধুরী, ওমর আলী, নাজমা সুলতানা, জাহানারা আরজু, তোমাদের খুব মনে পড়ে।


রোকনুজ্জামান দাদাভাই তুমি চলে গেছো সেই কবে কচিকাঁচা ছেড়ে
রফিকুল হক দাদুভাই তুমি তো আছো চাঁদের হাটে জোছনা ফুল পাখিদের সাথে।


আসাদ চৌধুরী, রবীন্দ্র গোপ এর এক টুকরো রুটি নিয়ে আবার যদি স্বৈরাচার তাড়াতে গিয়ে
জেলের ঘানি টানতে হয়
আমি তার পাশে থাকতাম।


কবি মোহন রায়হান জেলখানার কবি
সত্যেন সেন বুকতার ইস্পাত কঠিন
আবার পরে নিলাম জেলের কবিতা।


গাজীউল হক, রফিকুল ইসলাম
কবীর চৌধুরী, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
স্মৃতির শহর থেকে ধুলাবালি কুড়িয়ে
তোমাদের যদি একখানি পান্ডুলিপি আমার হাতে এসে পৌঁছতো আমি গোগ্রাসে গিলি খেতাম
অন্তরের অন্তস্থলে।


আবু হাসান শাহরিয়ার,আবদুল হাই শিকদার,আবু তাহের মজুমদার,আজিজুর রহমান,আনিসুল হক,আনোয়ার পাশা,আবদুল মান্নান সৈয়দ।


তোমাদের কবিতা আমার এ পোড়া চোখে আর কোনদিন দেখতে পাবো না।


আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ শহীদের রক্তে রাঙ্গানো কুমড়ো ফুলে ফুলে ভালোবাসার অবয়ব অপেক্ষারত মা।


সূর্যের শি৺ড়ি বুক।


আবুল হাসান,আবুল হোসেন,আল মুজাহিদী,আবিদ আজাদ,আলাউদ্দিন আল আজাদ,আজিজুর রহমান আজিজ,আবিদ আনোয়ার,আবদুল হাকিম,আহসান হাবীব, সৈয়দ মোহাম্মদ শায়েম।


তোমাদের কবিতার গন্ধ খুঁজে আমার বুকের মিনারে
অনুভবের গভীরে আপ্লুত হই বারবার।


আবদুল গনি হাজারী,আসাদ বিন হাফিজ,মনিরউদ্দীন ইউসুফ,মতিউল ইসলাম,ওবায়েদ উল হক, ওবায়দুল গণি চন্দন, টোকন ঠাকুর,হুমায়ুন কবির,শহীদ কাদরী,সাযযাদ কাদির
দৌলত উজির বাহরাম খান,সানাউল হক খান,সন্তোষ গুপ্ত।


তোমাদের কবিতা সাত সাগরের মাঝি হয়ে উত্তাল তরঙ্গে ভেসে বেড়ায়
সেই সব দিন গুলোতে
আমার আর কোনদিন ফিরে যাওয়া হবেনা।


আমি যে এক বাতিল কবি অপাংক্তেয় অবাঞ্চিত নিঃসঙ্গ উদ্বাস্তু!


সমুদ্র গুপ্ত সাত সমুদ্র তেরো নদীর নান্দনিকতা
তোমার হৃদয় জুড়ে


রতনতনু ঘোষ


চন্দ্রাবতীর হাট ছুঁয়ে আজও ঘুরে ফিরে
আমার হৃদয় আমার আত্মা।


আবেদ চৌধুরী,কামাল চৌধুরী,খালেক দাদ চৌধুরী,বেলাল চৌধুরী,ময়ুখ চৌধুরী,আহমদ ছফা,তাহমিমা আনাম,রাধারমণ দত্ত,গোবিন্দচন্দ্র দাস,দিলওয়ার,চিত্তরঞ্জন দেব
দৌলত উজির বাহরাম খান,আনোয়ার পাশা,বেনজির আহমেদ,পূরবী বসু,অক্ষয়কুমার বড়াল।


তোমাদের কবিতায় ভাসমান আমার হৃদয়ের ভেলা।


সুকুমার বড়ুয়া ছড়ার ছন্দে তারার আলোর ঝিকিমিকি জ্বলে আমার বুকে।


মোহাম্মদ রফিক,খান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন
তোমাদের কবিতা কতনা বসন্তের ফুল।


সৈয়দ আবুল মকসুদ,মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান
মহীউদ্দিন,মাহবুব উল আলম চৌধুরী,আল মুজাহিদী,উকিল মুন্সী,গোলাম মোস্তফা,রফিক আজাদ,গোলাম রহমান,হাবীবুর রহমান,হাসান হাফিজুর রহমান, আসলাম সানী


শব্দের তরঙ্গ থেকে ভেসে বেড়ায় আমার রক্তের বুদবুদ
কবিতাঁর আত্মার খোঁজে তোমাদের কাব্যের ভেতর।


রহিমুন্নিসা,ফাল্গুনী রায়,শিতালং শাহ,সৈয়দ শাহনুর,ফজল শাহাবুদ্দীন,শামীম আজাদ।


তোমাদের কবিতার শৈলিতা নান্দনিক চিত্রকল্প
আমার হৃদয় ছুঁয়ে অনুপ্রাণিত হয় বারবার
ভোরের নির্যাসে
কোকিলের ডাকে, বসন্তের রক্তাক্ত পলাশে।


বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কবি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মানুষ বানানোর কারিগর।


শান্তিনিকেতনের কবি,আশরাফ সিদ্দিকী,জিল্লুর,রহমান সিদ্দিকী,সুকুমার বড়ুয়া,সৈয়দ সুলতান, মিনার মনসুর, নুরুল হুদা, নাসির আহমেদ


সংগ্রামী কবি সিকান্‌দার আবু জাফর তোমাদের আর কোথাও খুঁজে পাবো এমন সবুজ-শ্যামল ভূমি ছাড়া!


সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হক
ভালোবাসার কবি ত্রিবিধ দস্তিদার
কোন অজানা লক্ষ্যের পথে খু৺জবো তোমাদের?


পদ্মা মেঘনা ‌ ছুঁয়ে বুড়িগঙ্গার আঁতিপাঁতি স্রোত খুঁজে খু৺ড়ে আর কোনদিন তোমাদের ভালবাসার স্পর্শ আমার হৃদয়, আমার বুকে ফিরে আসবেনা!


নিসর্গের কবি আল মাহমুদ তুমি নেই
আধখানা চাঁদ নারকেল গাছের উপর আজও ভেসে বেড়ায়
বসন্তের জোছনায়।


শুক্রবারের ইত্তেফাকের পাতা, সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী, জনকন্ঠে তরুণদের জন্য সাহিত্য পাতা
ভোরের কাগজ বাংলাদেশ প্রতিদিন ইনকিলাব, মানবজমিন, যায়যায়দিন, মাতৃভূমি,জনতার সেই সব সাহিত্য পাতা গুলো আমার আজ চোখের তারা।


প্রথম আলো বাংলাদেশ প্রতিদিন যুগান্তর নয়াদিগন্ত ভোরের কাগজ আজকের কাগজ বর্তমানের কবিতার পাতা সব আজ স্মৃতি
আমার কাছে ধূসর পান্ডুলিপি, বাঙময় চোখ।


কোন দিন তোমাদের কবিতা
কোন দিন তোমাদের বইয়ের পান্ডুলিপি
আমার আর পড়া হবেনা হে প্রিয় কবি।


কাঁটাতারের বেড়ায় আমি এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি
ধুঁকে ধুঁকে প্রতিদিন জ্বলে যাই
দাউ দাউ আমার বুক, জ্বলন্ত অগ্নিশিখা।


প্রিয় কবি
জন্মান্তরবাদ, স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ ,দেশভাগ, যন্ত্রণা মানবতা, সাম্প্রদায়িকতা,বিভেদ,ধর্ম,জাতিসত্তা
এইসব যদি আর কোনদিন না থাকে
আবার যদি ফিরে যাই 30 লক্ষ বছর আগে
সেই মানব গুহায়
বাংলা তোমাদের সাথে দেখা হবে
জীবনের গানে,মানবতার গানে
হয়তো সেদিন আবার দেখা হবে
অনন্ত আলোকবর্ষ পরে।


আমি এক অবাঞ্ছিত অপাংক্তেয় নিঃসঙ্গ কবি
উদ্বাস্তু ভঙ্গুর বুক,পাঁজরে ডানা ভাঙ্গা পাখি
তোমাদের স্মৃতির সুর বুকে ধারণ করে
আমি গেয়ে যাই আজও বারবার


"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"।


কোলকাতা
রাত-৩,১০
১৬,০১,২১