প্রিয়তমা কোলকাতা


(প্রিয় কবি ছোটন গুপ্ত শ্রদ্ধাবরেষু)


#সুধীর_দাস


ভাইটা হারিয়ে গেছে দুঃসময় অসুস্থ মুহূর্তে
তার কিছুদিন পর মায়ের মৃত্যু একত্রিশ ডিসেম্বর!
নিজের পঙ্গুত্বের জ্বালা
দুই হাত বাঁধা ব্যান্ডেজ হাতে পায়ে ক্রাশে ভর দেয়া জীবন।


বাম হাত দিয়ে মাকে মুখাগ্নি করার পর
প্রতিদিন বামহাতে হবিসন্ন রাঁধা
আদ্যশ্রাদ্ধ শেষ করার মধ্যেই জীবনের হারিয়ে যায় সব।


তারপর
তারপর বেঁচে থাকার লড়াইয়ে দুটি সন্তান স্ত্রীকে নিয়ে উদ্বাস্তু জীবন।
বাবা অসুস্থ হওয়ার পর
ছোট ভাই তাকে নিয়ে আসে আপন ঠিকানায়
তার কয়েকদিন পর নাকি বাবার ‌মৃত্যু হয়েছে
চোখে দেখিনি।


অথবা তার আজও খোঁজ পায়নি
কিভাবে কোথায় কখন তার মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বাস হয়না
হয়তো হারিয়ে গেছে।


বেঁচে থাকার লড়াইয়ে দুটি সন্তান বুকে আগলে রেখে একটু একটু করে বেঁচে থাকা
একটু একটু করে উপরে ওঠা
একটু একটু করে স্বপ্নের সৌধ ‌পরিপূর্ণ করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।


সেইসব সংগ্রামের ভাগীদার ছিল আমার স্ত্রী
কোভিদ টুয়েন্টি শুরু হওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ
ব্রেন স্ট্রোক।


কোলকাতার সমগ্র হাসপাতাল আঁতিপাঁতি করে তাকে ভর্তি করানো
কিন্তু কোথাও কোন ডাক্তার তাঁকে এতোটুকু স্পর্শ করে চিকিৎসা করেনি।


একুশ দিন আঠাশ দিন তের দিন বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে অবশেষে আপন আলোয় এনে বিছানায় রেখে দেওয়া


দুঃসহ যন্ত্রণায় ছটফট করেছিল তার দেহ
বেঁচে থাকার আকুল আকুতি চোখের সামনে ভাসে প্রতিনিয়ত
অথচ একজন অসহায় স্বামী তাকে কিছুই করতে পারেনি।
অবশেষে একদিন সকালবেলা হারিয়ে যায়
না ফেরার দেশে।


প্রিয় কোলকাতার মধ্যে থেকে আমার প্রিয়তমা হারিয়ে যায়
শত খুঁজেও আর তাকে পাবোনা আমার জীবন আঙ্গিনায়।


তারপর নিমতলা থেকে ফিরে এসে আজও জীবন কাটে দুর্বিষহ দুস্থ অসহায়
মরে মরে বেঁচে থাকার মত।


এক দুই তিন,আমি একটি মেয়ে একটি ছেলে
এই আমার জীবন
জগত সংসার।


আত্মীয় বন্ধু বলতে
আমার অগণিত কবি শুভার্থী তাদের ভালোবাসা
তাদের সহযোগিতায়
তাদের উপদেশ
তাদের প্রার্থনা আমার প্রতি
তাদের স্নেহ ভালোবাসা আমার প্রতি
এটাই আমার জীবন এখন
আমার কোলকাতায় বেঁচে থাকার ইতিহাস।


প্রিয় কোলকাতা
যা আমাকে দিয়েছে
তারচেয়ে নিয়ে গেছে অনেক বেশি
তবুও তাকে ভালোবাসতে হয়
তবুও তাকে শ্রদ্ধা করতে হয়
এখানে বাংলা ভাষা আছে
এখানে কবিতা আছে
এখানে কবি আছে
কিন্তু আমার প্রিয়তমা নেই
তবু রয়েছে আমার প্রিয়তমা কবিতা


তবুও আমার প্রিয়তমা কোলকাতা।


কোলকাতা
সকাল১১.৫৫
২২,১২,২০