কবিতা জানে কখন ভিসুভিয়াস হয়ে জ্বলতে হয়


সুধীর দাস


কবিতা জানে কখন ভিসুভিয়াস হয়ে জ্বলে উঠতে হয়
তার রক্তাক্ত পাঁজর খুড়ে কখন বারুদের স্ফুলিঙ্গ জেগে উঠবে
সেটা একমাত্র সময় জানে, দেশ জানে, জানে মহাকাল।


কবিতা জানে কখন স্টেনগান হয়ে স্বৈরাচার একনায়কতন্ত্রে বুক কখন ঝাঁজরা করতে হয়।


কবিতা জানে কখন কুশাসনের কুষপুত্তলিকা দাহ করতে হয়
কাঁটাতার ডিঙ্গে কখন প্রজাপতি হতে হয় সেটা কবিতা জানে।


এখন দুঃসময়
এখন অন্ধকার


এখন বিবেক তাড়িত সময় অন্তলীন
অন্যায়ের দুর্বেদ্ধ প্রাচীর শাসকের বুকে লেপ্টে আছে
কালো সাপ নাগিনীর মতো।


চারিদিকে ফোসফোস আওয়াজ
গণতন্ত্র চিবিয়ে খাচ্ছে
ঢোক ঢোক করে গিলছে মানুষের অধিকার।


কবি তাই নিরেট অন্ধকারে বসে
মানবতার গান গাইছে ছিন্ন বীণার তারে
"আগুনের পরশমণি জ্বালাও প্রাণে"।


ভুতুড়ে অন্ধকারে তার কণ্ঠস্বর কর্কশ


এইসব অন্ধকারের অথর্ব দম্ভ ছিঁড়ে
একদিন কবিতা জেগে উঠবে


মাতৃভূমির অগ্নিগর্ভ অবয়বে।


শুধু সময়ের অপেক্ষা
কবি হাসবে শান দেয়া উঠানে
রক্ত বারুদে মুক্তির মিছিলে
মৃত্যুঞ্জয়ী গানে।


ঘুমন্ত ফুজিয়ামা আবার জেগে উঠবে
কবিতা জানে
হিরোশিমা নাগাসাকি ধ্বংসের বুকে
কিভাবে ফসল ফলাতে হয়।


কবির চিৎকার, কবির হাহাকার, শব্দের ঝংকার
কিভাবে বুলেট হয়ে ভেদ করে স্বৈরাচারের মসনদে
সেটা কবিতা জানে।


কলকাতা, ২৯ ডিসেম্বর-২২


কাঁটাতারে ঝুলন্ত ঝলমলে যে যুবক


সুধীর দাস


কাঁটাতারে ঝুলন্ত ঝলমলে যে যুবক
সে যুবক আমি
দুটি ডানা শকুনের মত ছিঁড়ে নিয়ে গেছে
যে বিচ্ছেদের স্টেনগান
অন্ধকার চোখের গর্তে ফুলে ফেঁপে উঠছে
আগামী দিনের আলোর ইস্তেহার।


আমার বুক অটল পাথরে হিমশীতল হিমালয়
আমার পাঁজর আমাজনের আঁকি-বুকি বন
আমার চেতনায় অগ্নি স্ফুলিঙ্গ আগ্নেয়গিরি
আমার মেধায় সবুজ শ্যামল দেশপ্রেম
মা মাটি স্বদেশ,মাতৃভূমি পিতৃভূমি।


রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন ছেঁড়া মাংস উদ্ধত হাতের মুঠোয়।


কাঁটাতারের বুকে যে ঝলমলে প্রজাপতি উড়ে
সে আমি
উড্ডীন নীল আকাশে আমার রঙধনু আবেগ
তেজদীপ্ত সূর্যের মতো অগ্নিশিখা
জ্বলে আমার চোখে।


মিছিলের ভেতর গুলি খাওয়া একঝাক কবুতর
বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত
তার মধ্যে আমিও আছি
বুকের ভেতর বিবেকের সুনামি সাইরেন।


কাঁটাতারে বিদ্ধ যে গুলি খাওয়া যুবক
সে আমি
আমার মুখে অগ্নিবর্ষণ,


কুশাসন,স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক
গণতন্ত্র মুক্তি পাক!


কলকাতা, ২৮ ডিসেম্বর -২২