“অনাহারীর অমূল্য হাসি”


চৈত্রের দাবদাহ।
প্রকৃতি যেন আজ করে আছে অভিমান;
দিচ্ছে না শীতল সমীরণ।
ত্যজস্ক্রিয় সূর্যের দাপটে প্রাণের পাখিটা-
বারবার তৃষ্ণার্ত হয়ে যাচ্ছে!
শরীর যেন হয়ে আসে অবশ, চোখে খেলে যায় আলো আঁধারি ছায়া।
শহরে বৃক্ষের ছায়া বড্ড বিরল।
রাস্তার ধারে এক চায়ের দোকানের ছায়ায় এসেছি;
নিতে একটুখানি বিশ্রাম।
প্রকৃতির নয়- মনুষ্যজাতির আবিষ্কার পাখার বাতাসে;
শরীরকে শীতল করছিলাম সাথে এক চাপ চা।
হঠাৎ এক বৃদ্ধা এসে কিছু সাহায্য চাইলেন।
আমার কাছে দেবার মতো সেইরকম অর্থ ছিল না-
বেকারদের যা হয়।
বৃদ্ধাটি খুব রুগ্ন ছিল-শরীরে বল ছিলনা বললেই চলে।
বয়সের ভাঁড়ে কুঁজো হয়ে গিয়েছেন।
আমি বৃদ্ধাকে পাশে থাকা ১০টাকা প্লেট দরে তেহারির দোকান থেকে-
কিনে দিলাম এক প্লেট তেহারি।
বৃদ্ধাকে দেখে হচ্ছিল মনে অনেকদিন হলো পেটে কিছু খাবার পড়ে নি।
কাঁপছিল খুব-পারছিল না খেতে।
কি মনে করে মাতৃতুল্য বৃদ্ধার মুখে আমি খাবার তুলে দিলাম-
খুব তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছিলেন বৃদ্ধাটি।
আর তার আঁখি থেকে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রুজল।
খাওয়া শেষে তার ঠোঁটে ছিল অমুল্য হাসি ঠিক যেন-
প্রেমিক যুগলদের ভালবাসার আকাশে পূর্ণিমা চাঁদের হাসি।
বললেন বৃদ্ধা আমায় “বাবা গো বাইচা থাইক্কো-মেলা কতদিন খাউন পাইনা”।
আমার আঁখি থেকে কিছুটা অশ্রুজল আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে-
বৃদ্ধার স্নেহ নিয়ে চললাম আপন পথে।
এমন অনেক অনাহারীর অমুল্যহাসি যায়না দেখা-
দিনের আলোর মাঝেও আঁধার হয়ে বিলীন হয়ে যায়!