তিথি আজ অষ্টমী মহাপূজার আয়োজন
রাজোদ্যানে রাজমাতা তার ই আহবাহক।
গিরিজা রূপে পূজা হবে ভবানীর
মাহেন্দ্রযোগ আজ এই মহা তিথির।
পুলকিত মহল খুশি প্রজাগন।
প্রতীক্ষা হলো সান আসিলো শরৎ।
নবরাত্রির শ্রেষ্ঠ রাত আজ মহাসমারম।
পূজানন্দে প্রীত আজ এই পূর্ণ সভা
নৃত্যগীত রসিক রঙ্গে মজেছে হৃদয়।
শুরু হলো পূজা পাঠ, উচ্চস্বরে বাজে ঢাক
মন্ত্রের নিনাদে ভেদিছে অম্বর।
রীতি আছে সহস্র আচারের বাঁধন
তন্ত্র মতে পূজা দেবে রাজা দেবনারায়ণ।
সেই মতো হলো আজ রাজআয়োজন
দিবসের পূজা সারে রাজ পুরোহিতগন।
এ পূজার হাজার নিয়ম, রীতি অন্তহীন
একশত অষ্ট কমল হবে নিবেদন।
সাথে আছে অপরাজিতা সম সংখ্যায়।
বলি নেবে ভবানী একশত অষ্ট ছাগ মস্তক।
আয়োজন এমন ই বর্ণনা অতীত
কালের নিয়মে তা হবে জনশ্রুতি।
উচ্চকণ্ঠে মন্ত্র পাঠ, হোম আহুতি
সব নিয়ে আজ তা রাজসুয়ো রুপি।
ধীরে ধীরে বলি দানের সময় আগত
আনা হলো অজ শিশু একশত অষ্ট।
ক্রন্দনে মুখরিত দেউলী দালান
মৃত্যু ভয়ে কম্পমান জীবের পরান।
কে ভেবেছে সে অর্থ, জীবনের দাম
উচ্চ স্বরে বাজে ডাক  উচ্চ মন্ত্র পাঠ।
একে একে ছেদক  শির করে ছেদ
শনিত স্রোতে  যায় ভেসে পূজার দালান।
হেনো কালে আসে কন্যা মনোরমা নাম
ব্যাকুল চিত্তে পিতারে কয়, কেমন পূজা দ্বারেতে তোমার।
না আছে ভক্তি, না প্রেম ভাব
কেবল ই উগ্রতা মত্তবিলাস।
এরে কহো পূজা দেবীর সাধনা
ধিক পিতা ধিক তোমারে।
সভা হলো স্তব্ধ শুনে কন্যার কঠিন বচন।
রুষ্ট হলো সভ্যগণ, স্তম্ভিত রাজন নারায়ণ।
একি কথা কও তুমি কন্যা প্রিয় মোর
এমন প্রথা অনুসরণ দ্বি'শত বছর অতিক্রম।
ওঠেনি প্রশ্ন কভু আসেনি বাঁধা
লোকাচার এই মোর রাজ্যের নিয়ম।
তুলেছ প্রশ্ন তুমি প্রিয় তনয়া
শুনলে পাঁচজন, দেবে ধিক্কার তোমায়।
সে বড় যাতনা মোর তরে
মিনতি করি তোমায়, যাও নিজ কক্ষে।
না। পিতা শুনবো না তোমার মিনতি।
অন্যায় এ যে দুর্মতি তোমার।
পুণ্য লাভ হবে কি নিষ্পাপ ক্রন্দনে
এই কি বিধান বলুক বিজ্ঞজনে!
হৃদয় মোর কেঁদেছে ওই ব্যাকুল চিৎকারে
বুজিয়ে দাও এ কেমন রীতি পূজা যজ্ঞের।
পাপিষ্ঠা কন্যা, ওহে দুর্মতি
বিদায় নাও এই স্থল হতে, নহে দেবো অভিশম্পাত।
এই বলে আসন হতে ওঠেন রাজর্ষি,
সাবধান করে দেন রাজা অবন্তির।
সভ্যগণ রঙ্গ করে নিয়ে কন্যার হৃদয়
কেহ বলে বায়ু দোষ, বলে কেহ এ কুতন্ত্রের প্রভাব।
সভ্যগণ বিচার চায় রাজনের নিকট
এ হেনো দুর্মতি যেন ক্ষমা নাহি পায়।
পরিস্থিতি বিচারে রাজ আদেশ আসে
স্বীয় কক্ষে বন্দি হয় দুহিতা  দুঃখে।
বুঝিলনা কেহ বধির হৃদয়ের ব্যাথা
ভক্তগণ 'জয় ভবানী ' বলে করে জয়গান।
নিশি হয় গভীর অষ্টমীর রাত।
জয়ঢাক বাজিয়ে চলে শোণিত স্নান।
ব্যাথিত হৃদয়ে ক্লান্ত দেহে নিদ্রা অবশেষে
স্বপ্নমায়ায় মনোরমা দেখে ভবানীকে।
কাঁদিছেন জননী ভগ্ন হৃদয়ে
এ কেমন পূজা মোর পলক্ষার উল্লাসে,
ত্যাগ করি এ পূজা
পরে থাক পাষান কায়া মোর।
ভক্তি আজ তলানিতে অস্র স্রোতে
চাইনে এমন পূজা, ত্যাজি রাজারে।
ধীরে ধীরে নিশি আজ সমাপনের পথে
বলি দান শেষ লগ্নে পূজা সমারোহে।
পূজারী বিলায় যজ্ঞের  বিভূতি  
ভক্তগণ উচ্চস্বরে বলে 'জয় ভবানী'।
এ কি হলো ঊষা কালে রবির উদয়
গ্রহণে ঢাকা পরে অরুণ হেথায়।
পূজা মাঝে গ্রহণ আজ করেছে অশুচি
এ তোমার দায় রাজন, কন্যার মূর্খামি, বলে বিদ্বজ্জন।
কুপিতা  হয়েছেন দেবী,
তাঁর রোষানলে, স্বর্ণ প্রাসাদ হবে ছারখার তবে।
খবর আসে হেনো কালে অন্তঃপুর হতে
রাজকন্যা বিলাপ করে অসুস্থ শরীরে।
পন্ডিতেরা বিধান দেন কুপিতা দেবী
করা হোক বিশেষ যজ্ঞ দোষ খণ্ডনের।
নবমী হলো ভারাক্রান্ত
রাজপুরে একি দুর্গতি এলো অবশেষে।
সারা হলো পূজাপাঠ  হোম আহুতি।
এলো নিশি নবমীর রজনী গভীর।
নিদ্রাময় রাজ পুরী রাজন্যসহ
হেনো কালে স্বপ্নে আবির্ভূতা দেবী।
রাজাসহ সভ্যগণ দেখেন ভবানী কে
কাঁদিছেন দেবী অঝোর নয়নে।
রুধিরের ধারা যখন সুরঞ্জনায় মেশে
দেবী হন অন্তহীন  সেই মাহেন্দ্রক্ষনে।
জ্ঞানচক্ষু উম্মিলিত সভ্যগণের আজ
সকলে দ্রুত বেগে আসে দেব লয়ে।
একি সাজ ভবানীর পাষান কায়ার
খসে পরে রত্ন সব স্বর্ণ অলংকার।
পূজা বেদির জৌলুস আঁধারে মেশে
শোকময় পরিবেশ শুধু চারিধার।
রবি হলো উদিত রক্তিম বর্ণে
দশমীর সুর বাজে অখিল পবনে।
রাজা ছোটেন সেই কক্ষে, যেথা বন্দিনী দুহিতা
বুজেছি আজ আমি তোমার বচন।
কিন্তু একি হলো আজ, সময় অতিবায়
সমস্ত শরীর তার তপ্ত অসার প্রায়।
মৃত্যু পথে কন্যা মোর আমারই দোষে
বিলাপ করিছেন রাজন বসে ভূমির'পরে।
ধীরে ধীরে প্রাণ বায়ু হলো নিঃশেষ
কন্যা ঢোলে পরে, মৃত্যুর কোলে অবশেষ।
ব্যাথিত পিতা শোকে করে ক্রন্দন
দশমীর সুরে আজ মুখরিত ধরাতল।
কেমন পূজা হলো এই পুরীতে
নিষ্ঠা আচার জলাঞ্জলি শোক সাগরে।
এমন ভাবে শেষ হবে কে জানতো
দশমীতে বিদায় নিলো কন্যা সহ ভবানী।
প্রেম যেথা চাপা পরে শুষ্ক নিয়মে
কি মূল্য সেই পূজার সেই আচারের?