কবি কবীর হুমায়ূন  রচিত "কবির আকাল" কবিতার পাঠ প্রতিক্রিয়া


শ্রদ্ধেয় কবি কবীর  হুমায়ূন  ভাই, আপনার রচিত "কবির আকাল" কবিতাটি পাঠ করে অনেক ভালো লাগলো।  আমার পঠিত "কবি" ও "কবিতা" বিষয়ে  অনেক আখ্যান আপনার কবিতা পাঠে স্মরণে আসলো।  তাই কিছু বিষয় এখানে শেয়ার করলাম।

একজন কবিকে বুঝতে হলে বস্তুত তার জীবনকেও বুঝতে হবে। কারণ সেই কবিই মহৎ যার জীবনের সঙ্গে তার কবিতার সখ্য আছে। জীবনবোধ কবিতার ইতিহাসে অনেক মূল্যবান। আর এই জন্য পৃথিবীর অধিকাংশ মহৎ কবিদের জীবন হচ্ছে দুর্দশা আর লাঞ্ছনার ইতিহাস।
একজন কবি সেই সর্বগ্রাসী অস্তিত্ব, আপাত চোখে যার সবকিছু দরকার অথচ যাকে কারও দরকার নেই। সত্যিকারের একজন কবি তার সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে ধারণাতীত ক্ষমতাবান। এ জন্য জনসাধারণের রুচি থেকে তার রুচি অনেক তফাতে। জনসাধারণের কাছে মাঝে-মধ্যে সে হাস্যকর।
সত্যিকারের একজন কবি গ্রামে বা নগরে আত্মনির্বাসিত। কবিদের নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত কোনো জনপদ দুনিয়াতে নেই। তার নিবিষ্টতা দরকার, প্রয়োজন আত্মমগ্নতা। আমার বিশ্বাস হট্টগোলের ভেতর কবিতা তৈরি হতে পারে না।
একজন কবি অনেক কিছুরই সমীকরণ করতে জানে, কিন্তু সে বলতে পারে না সে কী কী জানে আর কী কী জানে না। মহত্তর কোনো কবিকেও যদি জিজ্ঞেস করা হয় ‘কাকে বলে কবিতা’। তাহলে আমার বিশ্বাস সেন্ট অগাস্তিনের মতো সেও বলবে যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয় তো আমি জানি না।যদি কুড়িজন কবিকেও একই প্রশ্ন করা হয়, মনে হয় কুড়িজনের উত্তর হবে কুড়ি রকম। ‘কাকে বলে কবিতা যদি তা না বাঁচায় দেশ কিংবা মানুষকে’, এভাবেই চেশোয়াভ মেউশ বিস্মিত হয়েছিলেন তার প্রথম দিকের এক কবিতায়।
পৃথিবী যেমন পরিবর্তিত হয় নিরন্তর, যেমন গত একশ’ বছর আগেকার মানুষের পোশাক দেখে আমাদের হাসি পাবে হয়তো এ সময়ে বসে- একজন কবির চিন্তাও এভাবে পরিবর্তত হয়। তার চিন্তা প্রসারিত হতে হতে তার ধারণাগুলো বদলাতে থাকে।
এ জন্য একজন কবির প্রথম দিকদার কবিতার সঙ্গে পরিণত বয়সের কবিতার চিন্তার তফাত হতে পারে। ঘটতে পারে স্ববিরোধিতাও।
একজন কবিকে বুঝতে হলে বস্তুত তার জীবনকেও বুঝতে হবে। কারণ সেই কবিই মহৎ যার জীবনের সঙ্গে তার কবিতার সখ্য আছে। জীবনবোধ কবিতার ইতিহাসে অনেক মূল্যবান। আর এই জন্য পৃথিবীর অধিকাংশ মহৎ কবিদের জীবন হচ্ছে দুর্দশা আর লাঞ্ছনার ইতিহাস।
সম্ভবত কবিরা ভিন্ন তাদের কণ্ঠস্বরের কারণে, আঙ্গিকের কারণে, নইলে সব মহৎ কবিই এই পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য অথবা ন্যায়ের শাসনে আলোকিত দেখতে চেয়েছেন। বাংলা ভাষার বিষাদাচ্ছন্ন কবি জীবনানন্দ দাশেরও এত যে বিষাদ। তিনিও শেষ পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠে বলেছেন ‘আমরা তিমির বিনাশী’।