আমি জন্মেছি বাংলায়,
ইছামতির কুল ঘেঁষা ছোট্ট একটি গ্রামে
কাশফুলে ঘেরা ছায়া সুনিবিড় এক শান্তির নীরে
যেখানে নেই আকাশ ছুঁয়া অট্টালিকা, নেই ইট পাথরের গড়া রঙিন শহরের কালো ধুঁয়া
যেখানে নেই শত মানুষের কোলাহল, নেই ছকে বাধা জীবন, আর জীবনের মাঝে শত ব্যস্ততা
নেই শূন্যতা, নেই চাওয়া বা না পাওয়ার মাঝে বিষণ যন্ত্রণা ।।


সেখানে আছে কদম শিউলির সুবাস ছড়ানো বাতাস, আছে ঋতুরঙ্গমীর রূপের খেলা
আছে মাঠ ভরা ফসল, গুলা ভরা  ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ
আছে কোকিলের মিষ্টি মধুর কুহু ডাক, নদীর কলতান, রাখালের সুরধধন্ননি
কাশবনে ঘেরা আঁকা- বাঁকা মেঠো পথ , শ্যামল শোভাময় সবুজ বনানী
আরো আছে সাদামাটা সহজ-সরল, নিখাদ জীবনের কত গল্পকাহিনী ।    


আমি ধন্য জন্মে, ওই বাংলার মাটিতে
ছবির মতো আঁকা সেই ছোট্ট গ্রামখানিতে
যেখানে কেটেছে আমার দুরন্ত শৈশব , কৈশোর
আজও স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে দেখি
কত দুরন্তপনা, কত হৈ হুল্লোড় ,কত ছুটাছুটি
কত ইছামতীর টলটলে পানিতে লাফালাফি-ঝাপা ঝাঁপি
অতঃপর মায়ের হাতে পিটনি …
কত আম-জাম-বরুই-কাঁঠাল,
কত দোয়েল-খঞ্জনা-শালিক বউ-কথা পাখি
কত দিগন্তসায়তি শস্য -প্রান্তর , অলি -গলি চুষে বেরানো
কত বর্ষা-বাদল, বৈশাখী ঝর, কত হেমন্ত বসন্ত, চিত্র দুপুর  
কত দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লা-ছোট, মোরগ লড়াই
বায়স্কোপ সাহেব বিবির বৈঠকখানা
কত ভাটিয়ালী ও পল্লীগীতি
কিন্তু আজ সবই যেন কেবলই স্মৃতি ?
বারো হাজার মাইলের দুরের এই পরবাসে
শৈশব হারিয়ে গেছে ব্যস্ত জীবন নামক ঘানির পিষ্টনে
তাই কি হবে আজ বৃথাই স্মৃতির লাগাম টেনে?


মাঝে মাঝে বিষাদ ছুঁয়ে যায় শ্যাওলা রঙ্গের দুচোখের আয়নায়
আনমনে ভাবি এই ইট পাথরের শহর যেন আমার বড্ড অচেনা …
এই মস্ত শহরে শত কিছু পাওয়ার মাঝেও যেন বিষম শূন্যতা  
দামী গাড়ী-বাড়ি, অর্থ-প্রতিপত্তি, ভোগ-বিলাসিতা - কি নেই এখানে
শত কিছু পাওয়ার পরও  ভরে না এ পরান, হৃদয়ে মিটে না তৃপ্তি
চাতকের ন্যায় প্রতীক্ষায় ভাবি, একদিন যা পেয়েছি বাংলায়
তা কি আর ফিরে পাব এই দরুন প্রবাসের মাটিতে
এখানে দেখিতে পাই না আমার বাংলা মায়ের মুখ  
এখানে আমার আমিকে পাই না খুঁজে  ।  


আমি স্বেচ্ছায় নির্বাসন চাই না,
চাই না স্বর্গ রাজ্যের চাবি
আমি শুধু ফিরে যেতে চাই যেখানে আমার মন ছুটে যাই অবিরত  
সেই জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলায় ধানসিরি নদীর তীরে  
সেই  জসীমউদ্দিনের আর নজরুলের সোনার বাংলাদেশে
সেই রক্তে ভেজা সেই সালাম বরকত রফিকের দেশে
আমার পথের পানে চেয়ে থাকা জননীর কাছে
আমি সত্যিই  ফিরে যেতে যাই জন্ম মাটির ঘরে, একেলা শূন্য হাতে
সেই ছোট্ট গ্রাম খানিতে
সেই শান্তির নীরে
সেথাই বাঁধিব আমার কুঁড়ে ঘর।