নিঠুর প্রবাস আমাকে কি দিয়েছে বরংচ শুধুই কেড়ে নিয়েছে আমার
জীবন খাতার পাতা থকে সাজানো গুছানো দুর্দান্ত দশটি বৎসর,
মায়ের আচল ভরা মমতা আর জন্মভূমির শিকড়ের বাঁধন ছিঁড়ে
আজ যেন এক পরগাছার মত আঁকড়িয়ে ধরে বেঁচে আছি এই যান্ত্রিক শহরে
আচমকা ওই ঝড়ো হাওয়াই আমার জীবনে সব কিছু ওলট পালট করে দিল
আর আমিও প্রবাসের চার দেয়ালে বন্দী হলাম এক আলোহীন কারাগারে
ছকে বাঁধা জীবন যাপন আর রক্ত ঝরানো অর্থই কিন্তু প্রকৃত সুখ নয়,
যে বয়সটা ছিল নিজেকে গড়ার, যে সময়টা ছিল আবেগ ভালবাসার
যেখানে স্বপ্ন খেলা করতো পঙ্খী রাজ ঘোড়ায় চেপে মুক্ত বিহঙ্গে উড়বার,
কিন্তু প্রবাস নামের ঈষৎ শব্দটিই যেন সব কিছু নিঃশেষ করে দিয়েছে ।
যে মাটির গন্ধে রসে কেটেছে আমার ফেলা আসা শৈশব আর কৈশোর
যে বাংলার সুনীল আকাশে বাতাসে খেলা করতো আমার নিরন্তর স্বপ্ন
প্রবাসের অনুর্বর মাটিতে আজ সবকিছুই যেন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে ।
এখনই তো সময় ছিল ভ্রমর হয়ে পদ্মবনে ফুলের মাঝে খেলা করতে
আর ভরা জোসনায় প্রেয়সীর কাজল মাখা কালো চোখে চোখ রেখে
উল্লাসে আর আনন্দ ভরা ভালবাসা নিয়ে সুখের শান্তির ঘর বাঁধতে
কিন্তু প্রবাসের ক্ষুধার্ত নোনাজলের খার যেন গিলে খেয়েছে আমার যৌবনকে
আমি যেন আজ এক মেরুদণ্ড হীন প্রাণী, অর্থহীন আমার জীবন
তাই আজ শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই স্মৃতিগুলো কে রোমান্হন করি
মায়ের হাতে রাঁধা সেই যে কই মাছের ঝোল আর সরর্ষে বাটা ইলিশ-পুঁটি
বর্ষার দিনে সেই ভরা স্রোতের গাঙ্গে কলা গাছের ভেলা বানিয়ে সাঁতার কাটা
স্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বনে বাঁদরে মাছ ধরা,
প্রকান্ড বাতাসে ঘুড়ি উড়ানো, বাঁশের কঞ্চী দিয়ে বঁড়শী বানিয়ে মাছ ধরা
এই সবকিছু যেন আজ প্রবাসের তুষের আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে গেছে ।
স্বাধীন দেশের পথ হারিয়ে আজ যেন শুধুই পরাধীন, লাঞ্ছিত আর বঞ্চিত
জীর্ণ বাসে তিক্ত এ জীবন আজ বরই তৃষিত এই মরু বসুধার বক্ষে
মাঝে মাঝে ভীষণ ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে চলে যেতে সেই পল্লী মায়ের কোলে
সেই ধূলাময় মেঠো পথে হেঁটে গিয়ে বটবৃক্ষের পানে প্রাণ জোড়াতে
কাঁচা ধানের ঢেউ খেলানো দিগন্তের নীল সবুজের মাঠে হারিয়ে যেতে
পাকা তালের ঘ্রাণ, টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার গান আর কোলা ব্যাঙের ডাক
আমার মনকে ঊজাড় করে তুলে শুধুই প্রবাসের কালিমা থেকে মুক্ত হতে
হায়রে প্রবাস তুই ফিরিয়ে দে, ভিক্ষা দে আমার সোনার রাঙ্গানো দশটি বৎসর