"পৃথিবীটা নাকি ছোটো হতে হতে..."


আগে আমরা চিঠি লিখতাম
বিজয়া, নববর্ষে...
পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড বা রঙ্গীন স্ট্যাম্পওয়ালা খাম,
‘শ্রীচরণেষু’ থেকে ‘ইতি তোমার’;
অক্ষরে অক্ষরে জড়াজড়ি করে সম্পর্করা ছুঁয়ে যেত ;
বহু বহু যুগ পরে, ধুলো ঝেড়ে, সে সব
চিঠির থেকে আবার নেওয়া যেত ইতিহাসের ঘ্রাণ...
আমরা এখন আর চিঠি লিখি না;
বদলে, পোস্টাফিসে টাকা রাখি ।

"ঘরে বসে সারা দুনিয়ার সাথে, যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোতে..."


পাড়ায় আগে টেলিফোন ছিলো একটাই –
বাপ্পাদের বাড়ি;
ভারী, কালো, ডায়াল ঘোরানো, লেসের ঢাকনা দেওয়া,
আমরা নাম রেখেছিলাম... ‘কালোবাবু’।
জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি জাগতিক সূচনা সমূহ,
দুর-দুরান্ত থেকে ওই কালোবাবু মারফৎ পৌছে যেত বাড়ি-বাড়ি;
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণে ফোন করার দরকার হলে অবশ্য
‘মেডিসিন সেন্টার’... ৩ মিনিটে ৩ টাকা।
কালোবাবু এখন সুদৃশ্য চেহারায়
আমাদের পকেটে পকেটে পোষ মেনেছে...
দূরভাষটা এখন গৌণ,
আরো অনেক মুখ্য কাজের কাজী সে।


"সারি সারি মুখ আসে আর যায়, নেশাতুর চোখ টিভি পর্দায়..."


মোহনবাগান-কসমসের ম্যাচ দেখতে
তপাদের বাড়ি ভীড় হয়েছিলো জব্বর।
বিরতির সময় টিভি বন্ধ আর সব্বার জন্য মুড়ি মাখা, চা;
শাটার দেওয়া সাদা কালো পর্দায়
হরেকরকম মধ্যবিত্ত বিনোদনের সাপ্তাহিক কর্মসুচী থাকতো;
দূরদর্শন তখনও ব্যক্তিগত সহজলভ্যতার বাইরে
সম্মিলিত হাসি-কান্নার শরীক ছিলো।
টিভি, এখন জিরো ফিগারে দেওয়াল জুড়ে বিদ্যমান;
বিনোদনের চেয়ে সে ঘরের শোভাবর্ধন করে বেশী।
বিনোদনের জন্য আমাদের অন্য আয়োজন।


"পাশাপাশি বসে একসাথে দেখা, একসাথে নয় আসলে যে একা..."


মিত্তিরদের বাড়ির বাইরের রক সারাদিন জমজমাট;
প্রহরে প্রহরে পালটে যেত প্রজন্ম আর বিষয়
সারাদিন কত যে রাজা-উজীর মারা পড়তো, আর
বিশেষজ্ঞের মতামতে ইতিহাস পুনর্রচিত হোতো...
সে সব সময় হাতের তালুর মত সবাই সবাইকে চিনতো,
একান্নবর্তী পরিবারের মত।
বোনের বিয়ের পরিবেশন থেকে ঠাকুমার সৎকারযাত্রা,
দল বেধে সবাই তৈরী।
এখন আমরা এসএমএস করি, চ্যাট করি...ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসআপ;
অবয়বহীন, মুখোশে ঢাকা কতগুলো গুণগত অস্তিত্ব;
রিও-ডি-জেনিরোর কোনো তরুনীর
সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা অনলাইন থাকি;
কিন্তু খবর রাখিনা,
পাশের বাড়িতে হাড়ি চড়লো কিনা... !


"ভেবে দেখেছো কি,
তারারা যত আলোকবর্ষ দূরে, তারও দূরে...
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে...সরে...।"