আবার ফিরে এল বাইশে শ্রাবণ।
আজ বর্ষশেষে হে অতীত,
                      কোন সম্ভাষণ
           জানাব অলক্ষ্য পানে?
           ব্যথাক্ষুব্ধ গানে
                      ঝরাব শ্রাবণ বরিষণ!


দিনে দিনে, তিলে তিলে যে বেদনা
                      উদাস মধুর
           হয়েছে নিঃশব্দ প্রাণে
           ভরেছে বিপুল টানে,
                      তারে আজ দেব কোন সুর?


তোমার ধূসর স্মৃতি, তোমার কাব্যের সুরভিতে
লেগেছে সন্ধ্যার ছোঁওয়া, প্রাণ ভরে দিতে
           হেমন্তের শিশিরের কণা
           আমি পারিব না।


প্রশান্ত সূর্যাস্ত পরে দিগন্তের যে রাগ-রক্তিমা,
           লেগেছে প্রাণের ‘পরে,
           সহসা স্মৃতির ঝড়ে
                      মুছিয়া যাবে কী তার সীমা!
তোমার সন্ধ্যার ছায়াখানি
           কোন পথ হতে মোরে
কোন পথে নিয়ে যাবে টানি’
           অমর্ত্যরে আলোক সন্ধানী
                      আমি নাহি জানি।
একদা শ্রাবণ দিনে গভীর চরণে,
নীরবে নিষ্ঠুর সরণিতে
           পাদস্পর্শ দিতে
                      ভিক্ষুক মরণে।
পেয়েছে পথের মধ্যে দিয়েছ অক্ষয়
                      তব দান,
           হে বিরাট প্রাণ!
তোমার চরণ স্পর্শে রোমাঞ্চিত পৃথিবীর ধূলি
           উঠিছে আকুলি’,
আজিও স্মৃতির গন্ধে ব্যথিত জনতা
কহিছে নিঃশব্দ স্বরে একমাত্র কথা,
           ‘তুমি হেথা নাই’।
বিস্ময়ের অন্ধকারে মুহ্যমান জলস্থল তাই
আদো তন্দ্রা, আধো জাগরণে
দক্ষিণ হাওয়ায় ক্ষণে ক্ষণে
           ফেলিছে নিঃশ্বাস।
ক্লে­দক্লি­ষ্ট পৃথিবীতে একী পরিহাস।
তুমি চলে গেছ তবু আজিও বহিছে বারোমাস
           উদ্দাম বাতাস,
এখনো বসন্ত আসে
           সকরুণ বিষণ্ণ নিঃশ্বাসে,
এখনো শ্রাবণ ঝরোঝর
           অবিশ্রান্ত মাতায় অন্তর।
এখনো কদম্ব বনে বনে
           লাগে দোলা মত্ত সমীরণে,
           এখনো উদাসি’
শরতে কাশের ফোটে হাসি।
জীবনে উচ্ছ্বাস, হাসি গান
           এখনো হয় নি অবসান।
এখনো ফুটিছে চাঁপা হেনা,
           কিছুই তো তুমি দেখিলে না।
           তোমার কবির দৃষ্টি দিয়ে
           কোন কিছু দিলে না চিনিয়ে
এখন আতঙ্ক দেখি পৃথিবীর অস্থিতে মজ্জায়,
           সভ্যতা কাঁপিছে লজ্জায়;
স্বার্থের প্রাচীরতলে মানুষের সমাধি রচনা,
           অযথা বিভেদ সৃষ্টি, হীন প্ররোচনা
           পরস্পর বিদ্বেষ সংঘাতে,
                      মিথ্যা ছলনাতে –
           আজিকার মানুষের জয়;
প্রসন্ন জীবন মাঝে বিসর্পিল, বিভীষিকাময়।।


   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)