(সময় ডিসেম্বরের দুপুর বারোটা বাজতে পাঁচ, সাল ২০২১)


আমার মৃত্যুর খবর শুনে যে ছেলেটা একছুটে আমাকে দেখতে আসবে জেনো, সে আমার প্রেমিক। আমার মৃত্যুর পরে যে প্রথম আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে জেনো, সে আমার বর। আমার কারোর ওপর কোনো অভিযোগ নেই, ছিলোও না কস্মিনকালে। কাল আকাশ মেঘলা থাকলে জেনো -একবিংশ শতাব্দীর শেষ মেয়েটা চলে গ্যাছে -


আর পাঁচটা মেয়ের মতো ওর সাথে যেতে পারিনি কোনো হোটেলে, সিনেমাহলে, পার্কে কিংবা ডিস্কে। আর পাঁচটা মেয়ের মতো ওর পছন্দের শাড়ির বদলে জিন্স, মিনি স্কার্ট টিপস পড়তে পারিনি। আমি নিপাট সংসারী। জানি এই বয়ান শুধু তোমার জন্য ---
অথচ দেখো আমি কেমন বোকার মতো তোমার সব কথা বিশ্বাস করে নিই। তুমি বলতে -'তুমি হাসলে আমার মনখারাপ উধাও হয়ে যায়, সিগারেট ছুঁই না, তোমাকে ছুঁয়ে বসে থাকি। তোমাকে পড়ার টেবিলে জড়িয়ে ধরলে তোমার কবিতার খাতা নাকি নিষ্ঠুর সতীনের মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। '


মাত্র দু বছর আমরা সংসার করলাম, তারপর কেন জানি না বাসের সিটে পাশে তুমি চুপ, আমার ঝালমুড়িতে আরেকটু ঝাল। তুমি ফিরে আসবে ভেবে আমি বারবার আত্মহ্যতার তারিখ পিছিয়ে নিয়েছি। কতবার বিষের শিশি হাতে থমকে গেছি, কতবার সিলিং ফ্যান আর দড়ির সাথে কাল্পনিক সংলাপ তৈরি করেছি। তোমার না ফেরার অপেক্ষায় আমার একতরফা প্রেম মিশে গেছে আমাদের একসাথে ঘর বাঁধার অকালমৃত্যুর শেষকৃত্যে।


যেদিন তুমি ছেড়ে চলে গেলে মনে হলো আমি ব্যারিকেডে বসে থাকা কাক, ট্রিগারে ভয় নেই, তুমি হুস বললেই আমি উড়ে যায় দূর বহুদূর। অভিক শুনছো? এবার থেকে সকালবিকেল শুষ্ক চুমু দিয়ে কানের কাছে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মাথা খাবো না। প্রতিদিন দুপুরবেলা তোমার লেখা কবিতা শোনাতে হবে না আর, বিকেলবেলা জোর করে তোমার বুকের বেডে ঘুমিয়ে যাবো না, অযথা গাড়ি ছেড়ে কষ্ট করে হাঁটতে হাঁটতে আমার সাথে বাজারে যেতে বলবো না। বিশ্বাস করো অভিক, আমি বিনীত অপয়া, তবুও এসব শাড়ি, তোমার বুকের বেড, হাত বালিশ, কবিতা, একসাথে বাজার আর তোমার উপন্যাসের পাতায় এককলম আমাদের সংসার নিয়ে তোমাকে বুকের কাছে টানতাম --


জানি আমার মৃত্যুর খবর শুনে তুমি নিশ্চয় আসবে -তাই এসেছো। আমার পচা লাশটা ছুঁয়ো না অভিক। তোমার জামায় দুর্গন্ধ ছড়াবে, তখন আমার মতো পরিষ্কার করে  দেবে কে?