শোনো গো; শোনো সবে শোনো দিয়া মন,
এক অভাগা প্রেমের গল্প আজ করি বর্ণন ।


'ঊর্মি' মানে সমুদ্রের ঢেউ••••
তাই বলে কি এই নামে থাকতে পারেনা কেউ ?
আছে•••••!
প্রতাবগঞ্জ এর মেয়ে ঊর্মি ভালবাসতো••••
রায়গঞ্জ এর ছেলে দেব কে,
দুই গ্রামের মানুষ ভালবাসতো••••
এদের মধুর প্রেমকে ।
দুজনের বাবা বিজনেস পার্টনার,
তাই বন্ধুুর মতো অসুবিধা হয়নি••••
অন্তরালে এদের মেলামেশার ।
স্কুল শেষে বা ছুটির দিনে,
তালদিঘীর পাড়ে, প্রেম প্রনয় চোলত••••
যেন রাধাকৃষ্ণ,  সেটা কে না জানে ।


একদিন দুজনের বাবা করলো ঠিক বিয়ে,
না না এদের নয়••••••!
দেবের দাদা রাহুল ও ঊর্মির বিয়ে ।
আসলে দুজনের বাবা জানত না কেউ।
দেব ঊর্মিও কিছুই জানত না••••
আপন মনে খেলছে প্রেমের ঢেউ ।
অবশেষে জানতে পায় দাদার থেকে,
বুকের ভেতরটা চুড় মাড় করে ভাঙে••••
জানালো সব রাহুল কে ।
ওদিকে ঊর্মি ও সব জেনে গেছে,
রাহুল কে সে মানতে পারবে না••••
সামি মিছে মিছে ।  
রাহুল মিথ্যা বলে বিয়েটা ভাঙে দেয়;
ওদিকে ঊর্মির বাবারও হার্ট এটাক হয়,
এতকিছুর মধ্যে মিষ্টি ভালবাসাটা••••
অন্তহীনে চাপা পড়ে রয় ।
দুই বাবা এখন রাইভালে পরিণত হয়েছে;
দেব ঊর্মির মেলামেশা বন্ধ হয়েছে ।
এর মধ্যে দেবের লন্ডনে পড়তে যাওয়া সব ঠিক,
সে কিছুই ঠিক করতে পারছিল না••••
দাদা বললো " এখন যা•••;
আমি পরে সব করে দেবো ঠিক ।"


দেখতে দেখতে  পাঁচটা বছর কেটে যায়,
প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি দিন, প্রতিটি বছর••••
দেব; ঊর্মির কথা ভেবে কাটিয়ে দেয় ।
পড়াশুনো শেষে একদিন সে দেশে ফিরে আসে,
ঊর্মি খোঁজ নিতে চাইলে••••
রাহুল একটু থমকে বললো আবেশে;
"ঊর্মির অন্য কারুর সঙ্গিনী,
তুই কষ্ট পাবি বলে জানাইনি ।"
সব কথা শুনে দেব চুপ থাকে,
কি বা করবে, কি বা বলবে কাকে ।


এরপর অন্য এক জীবন শুরু••••
হার্ট স্পেসালিষ্ট দেবের;
সকালে হসপিটাল, বিকেলেে চেম্বার••••
আর রাতে সঙ্গী হয় মদের।
রুটিন চেকাপে বেরিয়ে একদিন দেব দেখলো;
ফুলের মতো একটি মিষ্টি মেয়ে; হার্ট ডিজিজ••••
মুখটা খুব চেনা মানুষের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল ।
কিছুক্ষণ পরে ওর মা আসে,
"কে•••! ঊর্মি•••?"
দেব নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না,
নিজেকে সামলে, নাঃ, আর কিছুই বললো না ।
ঊর্মিকে মেয়ের ব্যাপারে সান্ত্বনা দিলে;
ঊর্মি কেঁদে ওঠে••••;  
অতিতের কথা উঠলে;
ঊর্মি না করে দেয়, নানান কথা শুনিয়ে••••
দেব কে কাপুরুষ ও বলে ।
তারপর সে চলে যায়,
দেব নিজেকে বড্ড অসহায় পায় ।
কিছুদিন পর দেব লন্ডনে ফিরে যেতে চায়;
আজানা অনন্তে ফিরেও যায় ।


এদিকে ছোট্ট মেয়ে রিয়ার জন্য••••
একজন হার্ট ডোনার পাওয়া যায়,
অপারেশন ও সুস্থ ভাবে হয় ।
ঊর্মির চখ কাউকে যেন খুঁজছিল,
দেব ক•••, সেদিন অতগুলো কথা••••
বড্ড বেশী শোনানো হয়ে গেছিল ।
এমন সময় কাউকে চেনা চেনা দেখ••••
কাছে যেতে দেখলো;
রাহুল ও তার বাবা মা, কাঁদছিল ।
ঊর্মি জানতে চাইলে••••
রাহুল একটা চিঠি ঊর্মিকে দেয় ।


চিঠি•••••••
" জানি হয়তো আমি সুপুরুষ নোই,
তাই বলে আমি কাপুরুষ ও নোই ।
যখন পড়বে এই চিঠি খানি,
আমি তোমাদের ছেড়ে••••
দুরে চলে যাব অনেক খানি ।
যদিও বা ভুল করে আমার স্মৃতি নাড়া দয়ে ।
রিয়াকে একটু বুকে জড়িয়ে নিও••••
ওর হৃদয়েই আমার হৃদয় ।
আজ নাইবা ভালবাসলে আমায়,
তবুও রিয়ার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে••••
সারাটা জীবন ভালবাসবো তোমায়,
ঊর্মি ভালো থেকো••••
এবার চির বিদায় দাও আমায় ।।"


ঊর্মি স্তম্ভিত রয়,
চিঠি টা হালকা হাওয়ায় উড়ে যায় ।
মুখে কথা নেই••••
শুধু দুচোখ ভরা জল অসহায়; গড়িয়ে যায় ।।


আমার গল্পটি ফুরোলো,
অন্তহীন বেদনায়••••••
অসহায় নটে গাছটি মুড়োলো ।।


আমার এক বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে কিছুটা কল্পনা ও ছন্দের মিশ্রণে সৃষ্টি এই কাব্য গল্প । ধন্যবাদ ।



প্রেম মানেনা বারণ - 18