'ভাল্লাগে না ছাই'
সতীশ ঘোষের আহ্লাদী মেয়ে সোহাগীর মুদ্রাদোষ ছিল এটা,
পায়ে মল, কোমরে বিছে, নাকো নথ
পরে ছমছম করে পাড়াময় ঘুরে
বেড়ায় সে....
বারো বছর বয়সে সোহাগীর বিয়ে
হল,ভিন পাড়ার সতীশ ঘোষের সাথে
বর দেখে মুচকি হেসে সোহাগী বললো-
'ভাল্লাগে না ছাই'
বাসর ঘরে আদর করে ডাকে সতীশ ঘোষ....
সোহাগী কাছে আয়?
চোখ নাচিয়ে মল বাজিয়ে বলে সোহাগী,
'ভাল্লাগে না ছাই'


দিন যায় মাস যায়
বন্দী জীবন অসহ্য হয় সোহাগীর
একদিন পালালো সে
সোজা এসে উঠলো বাপের বাড়ি
'আর কুনুদিন যাবো না খো'
করলো ফরমান জারি


সতীশ ঘোষ ব্যাজার হয়ে,
গাঁয়ে সালিশ ডাকল
মোড়ল শুধায় সোহাগীকে...
বরের ভাত খাবি কিনা বল?
কাপড়ের খুঁট দাঁতে দিয়ে
মাথা হেলিয়ে বললো- সোহাগী-
'অকে আমার এট্টুধনও
ভাল্লাগে না ছাই"।


জলের মতো বয়ে গেছে সময়
সোহাগী এখন আঠারো
এই ক বছরে যেন
অনেক বড় হয়ে গেছে সে...
আর সে চপলা হরিণী নয়
চুপটি করে বসে থাকে ঘাটের পাড়ে
যেন উদাসী বাউল।


সেদিনও বসেছিল সোহাগী
মূর্ছা যাওয়া ফুলের মতো
সূয্যি ঠাকুর পাটে বসছেন বুঝি
হঠাৎ ই বিয়ের বাজনা
ঢোল সানাই কাঁসি
চমক ভাঙে সোহাগীর
বিয়ের বাজনা শুনলে আজকাল
কেন মন মুচড়ে উঠে চোখে আসে জল?
তবু তাকায় সোহাগী অভ্যাস বশে
রিক্সার উপর বসে আছে বর
আগে পিছে বরযাত্রীর দল
কিন্তু কে ও?ঐ মুখ যে বড় চেনা তার!
হাহাকার করে ওঠে বুকের মাঝে
বারো বছর বয়সের ভূল
কখন যে ফুল হয়ে ফুটেছে
বুঝতেই পারে নি সোহাগী
এরই নাম কি ভালবাসা?


ছুটে গিয়ে বরের পথ আগলে
দাঁড়ায়ে সে
হাত জোড় করে বলে
ওগো আমার মুখের কথা শুনল্যা তুমি? উটা আমার মুনের কথা লয়
তুমি ছাড়া আমার যে কেহু নাই?
রক্তচক্ষু সতীশ ঘোষ বলে
শুভ কাজে জ্বালাস ক্যানে যা...
কুলক্ষণি!
জোড়া পায়ে মারে এক লাথি


বিয়ের দল চলে গেছে
অনেকক্ষন আগে.....
ঢোলের শব্দ মিলিয়ে যায়
দূর থেকে দূরে
চারিদিকে অন্ধকার উঠে দাঁড়িয়েছে সে,তাকে তো একাই চলতে হবে
চোখের জল মুছতে মুছতে
বিড়বিড় করে বলে.....
'ভাল্লাগে না ছাই'