দোরে দোরে ভিক্ষা চাইত আমার বাবা।
"দুটো ভিক্ষা দাও গো মা!"
আক্ষেপের সুরে বাবা বলতো,
"কুনোদিন ভিক্ষে করিস লাই রে বাপ! তুই লেখাপড়া কইরে মাথা উঁচু করি বাঁচিস।
বিনা পয়সায় কারুর কাছ থেইকে কিছু লিবি লাই কুনোদিনও। তোর এই পঙ্গু বাপটার মতন কারুর দয়ায় বাঁইচবি লাই তুই।"


তখন আমি খুব ছোট।
দূরারোগ্য অসুখে মারা গিয়েছিল মা।
মুটের কাজ করতো বাবা... আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো, আমি একদিন মানুষের মতো বাঁচতে শিখব।
একটা দুর্ঘটনায় বাবার ডান পা কাটা গেল!
বেঁচে ফিরলো সারাজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে।
পেশা হলো ভিক্ষাবৃত্তি।
আমার পড়াশুনার জন্য একটুকরো জমিটাও বেচে দিতে হলো।


লেখাপড়া করলাম, কিন্তু চাকরি পেলাম কই!
একটা কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াই রোজ। দেশজুড়ে আমার মতো হাজার হাজার বেকার। বেকারত্বের জ্বালা একজন শিক্ষিত বেকার ছাড়া আর কে বোঝে!
ভোট আসে ভোট যায়...
মানুষের ভালোর জন্য রাজায় রাজায় প্রতিযোগিতা চলে।
প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়।
ইস্তেহারের স্তূপে চাপা পড়ে যায় গরীবের প্রতিবাদ।
রাজা বদলায়, গরীবের দিন বদলায় না!
দয়ালু রাজা আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যায়...
বিনা পয়সায় রেশন, বিনা পয়সায় শিক্ষা, বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য.... আরো না জানি কত কি!
সেই চুঁইয়ে পড়া করুনার দানেই গরীবের স্বপ্নগুলো ডানা ঝাপটে মরে!
দয়া-দক্ষিণ্যের ভারে আমাদের মতো হতভাগ্যদের মাথা উঁচু করে আর বাঁচা হয় না।
তাইতো এ জীবনে আর ভিখিরী কলঙ্কটা কপাল থেকে মুছে ফেলতে পারলাম না! বাবার আক্ষেপটা আক্ষেপ হয়েই রয়ে গেল!
----------------------------------------
✍️সুলেখা রায়।(ভারতবর্ষ)