মহামারী কবলিত পৃথিবী।
জীবন-মৃত্যুর প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে আছি।
চারপাশে আদিমযুগীও খাঁ-খাঁ শূন্যতা!
বিস্ময়ভরা দু'টো চোখে আজ ও কালের ফারাক বোঝার চেষ্টা করছি!
সামনে-পেছনে... ডাইনে-বাঁয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টায় আমরা প্রত্যেকে।
বলা যায়, আরো একটা বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছি আমরা।


না! এ যুদ্ধ কিন্তু সে যুদ্ধ নয়....
এ যুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের চোখরাঙানি নেই... রণাঙ্গনে রক্তের হোলিখেলা নেই....
গা ছমছম করা ভারী বুটের শব্দ নেই....
মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের কানফাটা গর্জন নেই...
কিংবা আকাশে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে যুদ্ধ বিমানের অতর্কিত হানাও নেই।
বরং এ হলো আমাদের অন্তরে যুগ যুগ ধরে ঘুমিয়ে থাকা আমিটাকে জাগিয়ে তোলার যুদ্ধ। প্রতিপক্ষ যেখানে ক্ষুদ্রেতর একটা  অণুজীব। এমন একটি ভাইরাস যা কিনা সরাসরি মানবজাতির অস্তিত্বের মূলে আঘাত হেনেছে।
ভাইরাসের বিষে আক্রান্ত পৃথিবী জুড়ে  নিরন্তর মৃত্যুমিছিল!
আত্মীয়-বন্ধু ও চেনা মানুষগুলোর হঠাৎ মৃত্যুসংবাদ এক ধাক্কায় বেসামাল করে তুলছে হৃদয়ের অন্তস্থল! বেদনাদীর্ণ-- ভঙ্গুর-- ত্রস্ত-- অসহায় মনে এখন "পজিটিভ" থাকাটাও ঠাট্টা মনে হয়!


তবু এই মৃত্যুপুরীতে আমরা যারা টিকে রইলাম...
এই অতিমারী সময়ের বিষণ্ণতা কাটিয়ে শেষ অবধি চিরন্তন সহজ সত্যকে মেনে নিতেই হবে আমাদের... সে সত্য যতই কঠিন হোক। এই সত্যই হোক আমাদের অন্য এক উপলব্ধিতে উত্তরণের পথ।
অতিমারীর দূরত্ববিধি যেন আমাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে না দেয়।
তুচ্ছ একটা ভাইরাসকে পরাস্ত করতে গিয়ে যেন ভুলে না যাই, আমরা আদপে সমাজবদ্ধ জীব। বিচ্ছিন্নতার ভাবনাতেই ধ্বংসের বীজ লুকিয়ে থাকে।


এ লড়াই তাই আমাদের নিজেদের সাথে একান্ত নিজের লড়াই।
এতদিন যে রিপুগুলোকে বল্গাহীন ঘোড়ার মতো ছুটিয়েছি, সেই রিপুগুলোকে শান্ত করার লক্ষ্যে তৃতীয় চক্ষু খোলার দুঃসাহসী লড়াইয়ে সামিল হতে হবে আমাদের।
এ লড়াই তাই রোজকার ভোগ-জীবনের বিপরীত মেরুর লড়াই! নিজের উত্তঙ্গ অহংকারকে উপড়ে ফেলার লড়াই!
একান্ত নিভৃতে নিজের দিকে ঘুরে বসে নিজ অন্তরাত্মার সৎ মূল্যায়নের লড়াই!!


একটা প্রলয়ের পরই তো মানবসভ্যতা আবার নতুন করে ইতিহাস তৈরী করে নেয়!
দৃষ্টিটুকু উল্টে দেখলে কিন্তু আমরা সেই ইতিহাস সৃষ্টির সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে আছি।
বিশ্বাস রাখি, আমরা সেই ক্রান্তিকারী ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারবো....
আশা রাখি, আমরা এ যুদ্ধে জয়লাভ করবো।
"মানুষ বনাম ভাইরাস"-এর এই যুদ্ধ হয়তো বিবর্তনের ইতিহাসে "যোগ্যতমের জয়" তত্ত্বকে আরো একবার সত্য প্রমান করবে।
---------------------------------------
✍️সুলেখা রায়।(ভারতবর্ষ)