এই যে, তোমরা কি আমাকে কথা শুনতে পাচ্ছো?
শুনতে পাচ্ছো আমাকে?
জানি, শুনতে পাচ্ছ না, শুনতে পাচ্ছনা আমার কথা ,
পারবেই বা কেমন করে...
পাথর চাপা ঘাসের বুকে আমরা ঘুমিয়ে আছি।
পাথর চাপা ঘাসের বুকে ঘুমিয়ে থাকার কথা শুনে
অবাক হচ্ছ তাই না?
অবাক হবার কিছু নেই, তোমরা এখন শীতের শেষে
ঝরা পাতার মরমর গান শোনো স্বাধীন ভাবে
একদিন আমিও শুনতাম ,দেখতাম-
শীতের মিঠে রোদ পেরিয়ে কি করে চৈত্রের দাবদাহ হয়।
ভরা যৌবনা নদী বর্ষা শেষে বুকে খাঁখাঁ বালুচর বাঁধে -
তবে আমার সে শোনায় স্বাধীনতা ছিলো না
আমার সে দেখায় স্বাধীনতা ছিলো না ।
কতজনের কতরকম চিৎকার ভারি হয়েছে বাতাস
মিলিয়ে গেছে আকাশ থেকে আকাশে,
প্রিয়তমা স্ত্রী,মমতাময়ী মা, শ্রদ্ধেয় পিতা, ভালোবাসায় বাঁধা-
ভাই-বোন আর সন্তানের বিভৎস দেহ কাঁধে তুলে,
পা টিপে টিপে স্তুপ করেছি এখানেই, এইখানে-
যেখানে ফোঁটে আজ রঙ্গন, করবী, কৃষ্ণচুড়া।
রাত্রি শেষের সোনালী ভোর অস্ত যায় সন্ধ্যার কোলে
দূরের পাখি ফেরে নীড়ে, স্ব-স্বাধীনতায়
নদীর ঢেউগুলো কত স্নিগ্ধ আর শান্ত ,
যার বুকে ফোটে পদ্ম-শাপলা, বসে বাহারি প্রজাতপি
সবাই এখানে এখন ভালো আছে অনেক ভালো আছে ।
তাই কেউ রাখেনা আমার খবর--
একদিন আমিও মায়ায় বাঁধা ছিলা এই খেলাঘরে !
পদ্মা মেঘনা যমুনার বহমান স্রোতধারায় যে রমনী শুয়েছিলো
একদিন স্নেহের অশ্লীল ভঙ্গিতে ওদের তপ্ত ঘামের সোঁদা ঘ্রাণে
যার মমতার আঁচল ওড়ে স্বতন্ত্র পতাকায়
স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত শরীর তার,
নিস্তেজ হয়ে যাওয়া বোধ-বুঝতে দেয়নি সক্ষমতা।
সবুজ ফসলের মাঠ, গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ,
একখণ্ড মাটি জন্য, তেজস্বী জ্বলন্ত যুবকের বিপরীতে যারা
বিকিয়েছিলো সম্ভ্রম, দিয়েছিলো জীবন পেতে,
যাদের-কে ভীষণ অবজ্ঞায় তোমরা দিয়েছ
বীরাঙ্গনা খেতাব তাদেরই একজন আমি,
আমি ছকিনা, আমি আঙ্গেলা, আমি বিন্দা, আমি হরিদাসী।