বেলা তখন বিকেল পাঁচ, কুড়ি;
গিয়েছিলাম তোমার চারণভূমিতে, যেখানে শান্তিতে নিদ্রিত আছো।
সদর দরজাটি দু'হাত বাড়িয়ে ছিলো প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষমান,
সেখানে ডালিম গাছের ছায়াতল ছিলো কিনা খেয়াল করিনি
তবে কলাবতী, কামিনী, মালতী সহ নানান রঙের ফুল
     ও গুল্মলতায় আবৃত ছিলো-
বিশাল আম্রবৃক্ষ ছায়াশীতল করে রেখেছে গেহখানি তোমার।
পায়পায় গেলাম সেই চেয়ারটির কাছে, যে চেয়ারটিতে বসে
তোমার হৃদয় দুলে উঠতো ভাব-ভাষা ও  রস সম্পূর্ণ  নতুন ধারায়।
তোমার অনুপস্থিতি এতটুকুও টের পাইনি কবি, বরং অনুভব করেছি
আমাকে দেখে ভাঙা চেয়ারটি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে হাস্যজ্জ্বল মুখে
হাত বাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানালে, নিয়ে গেলে সেখানে-
যেখানে মমতাজ বেগম মনিমালার সাথে হয়েছিলো ফুলসজ্জা ।
তর্জনী উঁচিয়ে দেখালে সেই স্থানটি, যে স্থান দিয়ে চোর ঢুকে
বাসর রাতে মনিমালার সব গয়না চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলো।
যেখানে বসে রচেছিলে কবর,রাখালী-
নক্সি কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট।


তারপর  গেলে তোমার ছোট্ট গ্রস্থশালায়,
দেখালে তোমার সংগৃহীত, তাকে  সাজানো থরেথরে বই
নিয়ে গেলে যেখানে বসে চলতো জমজমাট সাহিত্য আড্ডা।
ব্যস্ত চড়ুইগুলো এখনো আগের মতই ব্যস্ত আছে
বকুলের ডালে বসে গেয়ে ওঠে পাখি আসমানিদের গান।
কাঠের বেড়ায় বসে দোয়েল শিসেশিসে বলে
'এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে'।
মৌন দেয়ালের ভাজেভাজে বেজে ওঠে তোমার প্রেম ও প্রণয়।
অলস স্থবির ফাউন্টেনপেনটির অকস্মাৎ ঘুম ভেঙে
নড়েচড়ে লিখতে চাইলো মেঘে মেঘে নক্ষত্রে থৈথৈ আকাশে
দ্বাবিংশ শতাব্দীর দুঃসময়ের কথা।


একদিন এখানে  হাওয়ায় হাওয়ায় প্রজাপতি উড়ে  এসে,
জীবনের নিরালস ভঙ্গিতে নিঃশব্দে ফোটাতো কাব্যের ফুলে
জরাগ্রস্ত মানুষের আর্তনাদ, গ্রাম বাংলার অনুপম দৃশ্যকল্প,
সর্বাপেক্ষা উত্তম উপস্থিতিতে আঁকতে মৃত্যুর গহন ছবি,
দুটিচোখ  একাগ্র চিত্তে এঁকে ফিরত গোধূলীর শ্বেতপত্র।


সাহিত্যের অমোঘ  সুবাস পেতে আমার নিঃপলক চোখ,
শরতের মেঘলা আকাশ ছুঁয়ে
একগুচ্ছ স্নিগ্ধ কোমল কাশফুলের তুলতুল ছোঁয়ায়
বিরতিহীন পড়ে যায় পল্লী কবিতা তোমার।


২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১