মাটিতে লেপটে আছে দুখিনীর শাড়ির আঁচল
                    এলোমেলো চুল উড়ছে বাতাসে।
ছেলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখড় ছাত্র
তারুণ্যদীপ্ত যৌবন,উচ্ছলতায় ভরা প্রাণ।
কিন্তু খাওয়া দাওয়ায় বড্ড উদাসীন
মুখে তুলে না দিলে খেতেই পারেনা।
তাই তো কখনো উঠোন থেকে উঠোনে ,কখনো
নড়বড়ে ঘরের দাওয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
ভাতের থালা হাতে ছুটে ফেরে জননী-
আর বলে এত্ত বড় হলি তবু নিজ হাতে খেতে শিখলি না।
বলি একটু খেয়ে নে বাছা
কেন বুঝিস না, মায়ের হাতে জমা আছে কত কাজ।


দিন যায়,মাস যায়, বছর যায়, কৃষ্ণচূড়ার রাক্ষুসে দাঁত ঝরে গিয়ে
পূনরায় গোপন মঞ্জরি দেয় উঁকি ,
শিমুল-পলাশের শাখায় দুলে “খোকা বলে পাগলী মেয়ে
                      এতো বুঝাই তবু কেন বোঝ না?
আমি শহীদ হয়ে গেছি, ওরা আমায়
বেয়নেটে খুচিয়ে খুচিয়ে নৃসংশ ভাবে হত্যা করেছে ।
শখের সাদা শার্টটি পেজাপেজা মেঘ হয়ে
উড়ে গেছে আকাশ থেকে আকাশে
বদ্ধভুমির সবুজ জমিনে শুয়ে আছি আমি।“


লক্ষ্মী মা আমার চোখ মোছো, রক্তের বিজয়ে
অশ্রু ঝরাতে নেই শহীদ স্মরনে!
তরুলতা, হরিৎ ফসলের ক্ষেত,
রিনিঝিনি পাহাড়ি ঝর্ণা, মাঠ প্রান্তর ,
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া,জাফলং থেকে সুন্দরবন,
ভদ্রা থেকে তিস্তা, চিত্রা থেকে পদ্মা,
মেঘনা-যমুনা- সুরমার জল ছুঁয়ে
রফিক, শফিক,সালাম,বরকতের দেখানো পথ ধরে
গিয়েছিলাম শেখ মুজিবের,সমাধীস্থল,
দেখলাম মাথার উপর ময়লার স্তুপ জমে গেছে।
আসাদের শার্ট উড়িয়ে হাওয়ায় নীলিমায়
ফিরে এলাম নিজের কবরে।


চোখের জলের ফোয়ারা ছুটাতে আবেগে ভেসে যায় নি
তোমার ছেলের বুকের রক্তে রঞ্জত রাজপথ।


আমার মতো অনেকেই শুয়ে আছি এখানে
কারো চোখ নেই, মুখ নেই ,নাখ নেই, কিচ্ছু নেই।
বুটের পাড়ায় পেট থেকে বেরিয়ে গেছে ভুড়ি ।


ওরা চেয়েছিলো তোমার বুকে রাজত্ব করতে
কিন্তু তোমার ছেলে হয়ে তা মেনে নেওয়া যায়া ?
বিজয় তো এনেই দিয়েছি
                      আমায় আর ডেকোনা জননী আমার ।
আমার কপল ভেবে
লাল সবুজের ওই পতাকায় দাওনা এঁকে শত চুম্বন ।


খোকা আমার , আমি তো কাঁদিনা , শুধু বুকটা হুউ করে ওঠে
যখন দিবা প্রহর জ্বলে ওঠে আপন শক্তিতে
উড়িয়ে স্বাধীন স্বত্তার নিশান
এক মুঠো ধুলি হাতে যাই ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়মঞ্চে
অনুভব করি আমার শহীদ সন্তানেরা কেউ ভালো নেই
ওরা কষ্টে আছে, বড় কষ্টে আছে।
যে রক্তের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিস বিজয় এনে...
  
চোখ মোছো হে বঙ্গ জননী
ক’জনে গেঁথে মালা নিয়েছে স্ব-হৃদয়ে বিজয়ের মহীমা!
দেশপ্রেমের আবেগ এমনই তো হয়।
আমি চোখ খুললে দেখি লাশ শুধু লাশ,
গলিত লাশ,ক্ষত বিক্ষত লাশ!
কতটুক কষ্টে নষ্ট ভ্রূণে জাতি চায় আশ্রয় !
কতটুক নষ্টে জননীর গর্ভে জন্ম নেয় পোতাশ্রয়!
কে লেছে বভালোবাসা নেই রক্তে,জমে আছে শুধু মেদ!
এই তো আছি বেশ আমাদের সমাধী
স্বাধীন তন্ত্রে হয়েছে বিকশিত
                            আফসোসের আর কিছু নেই।


২৮ ডিসেম্বর ২০২১