আমি এক পল্লীবালা, পল্লীর আঁকাবাঁকা মেঠো পথ
আমার নাড়ির বন্ধন।
জীবনের তাগিদে যান্ত্রীক শহর যন্ত্র বানিয়ে রেখেছে
আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধেছে বাস্তব অমানবিক ব্যস্ততা,
মাঝে মাঝে মনোভার নামাতে,হারাই শৈশব মনোময় ভাবনায়
মনে পড়ে সেই খয়েরি শালিকের জটলা, জোনাক জ্বলা সন্ধ্যা
মেঠোপথ, রাখালের বাঁশের বাঁশি, হারিয়ে যাই দাদির মুখের
বেঙ্গমা-বেঙ্গিমীর সেই রূপকথার গল্প রাজ্যে।


শিকড়ের টানে অনেক দিন পর ছুটে এলাম গ্রামে
দু’হাতে মেখেনিলাম গায়ে ধুলো-মাটি
শহুরে বাবু সেজে প্রায় ভুলতে বসেছি যে সুধা মাটির ঘ্রাণ।
কতদিন পর স্মৃতিময় ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম মনে নেই।
লোহার গরাদের নিচে লুকিয়ে থাকা টিকটিকিটা আমাকে দেখে
আনন্দে আত্মহারা, মনের খুশিতে টিকটিক গান গেয়ে উঠলো।


সারিসারি দাঁড়িয়ে থাকা তাল,সুপারি, নারকেল গাছ
বেড়ায় নেতানো মেটে আলুর লতা
          মাথা নুইয়ে সাধুবাদ জানালো ওরা,
আম, জাম, কাঁঠাল, শাখা দুলিয়ে জানালো স্বাগত।
আমাদের দোতলা ঘরটি টিনের ছাউনি,
এঁদো-ডোবা থেকে ভেসে আসা ডাহুকের গানের সাথে
টিনের চালে শিশির টুপটাপ শব্দে নৃত্য করে চলল রাতভর।
চোখের পাতায় হানাদিলো দোলনা দোলা শৈশব, দূরন্ত কৈশর
যদিও মাটির পথটি পিচঢালা কালো ফিতা বেধেছে মাথায়
ইলেট্রিসিটির আলোয় ঝলমলে তন্বী মেয়ের নাশপতি অবয়ব।


তবু সন্ধ্যা হতে জোনাকিরা ঝাকবেঁধে জ্বলে ওঠে আপন খেয়ালে
মাঝ রাতে শোনা যায় শেয়ালের হাক,
ভোর বেলা ঘুম ভাঙ্গানী গান হয় গাই দুয়েনির শব্দ।
মায়ের হাতের ভাপা-পুলি, রসে ভেজা চিতই,
ভোর বেলা রাতে রান্না জমাট বাঁধা মাছ ঝোলের সাথে
ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, হাতে ভাজা মুড়ি, ঢেঁকিছাটা চিড়া
এতো মমতা আমার সবুজ গ্রাম ছাড়া কে দেবে আমায়
একটু অবশরেই ছুটে যাই শিকড়ের টানে, আমার ছোট্ট গাঁয়ে।


১৪ ডিসেম্বর ২০১৭
সময় সন্ধ্যা ৬.০০