তুমি হয়তো ভুলে গেছ—
আমার অভিযোগ নেই;
যদি আমায় এখন দেখতে,
একটা ছেঁড়া গামছা কাঁধে,
ধুলোমাখা মুখে ঘাম শুকিয়ে যাওয়া পূরুষ—
আমি, যে ছিলাম তোমার প্রিয়তম।
ঘুনে ধরা সমাজের নির্মম ইতিহাস!
হয়তো তোমায় বলেছি বহুবার,
বইয়ের পাতায় মাথা গুঁজে রাত পার করতাম,
আমার মা খাবার বাঁচিয়ে হারিকেনের তেল কিনতেন,
আর আমি ভাবতাম—এই দেশের ‘মানুষ’ হব।
দেশ মাতার সাধ পূরণ করব!
কবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে—
পেলাম সার্টিফিকেট—
তিনটা, চারটা, পাঁচটা!
তবু অফিসের ফটকে ঢুকতে পারিনি—
চাইত ঘুষ, চাইত পরিচয়, চাইত বিস্তৃতি।
তোমার বাবা চাইছিল—
তোমার ভরণ পোষণের গ্যারান্টি,
আর আমি ছিলাম সম্ভাবনা।
তুমি ভালোবেসেছিলে, সত্যি—
কিন্তু প্রেমের পাতে ছাই উঠেছে,
আর তোমার পাশে এক সম্পন্ন পাত্র।
সেদিন হয়তো আমি হেরে যাইনি;
হেরে গিয়েছিল এই সমাজ মেরুদণ্ড!
তবু আমি মাথা নত করিনি,
চাকরি লাথি মেরে কোদাল তুলেছি—
এখন বাবার মতোই মাঠে কাজ করি,
রাত গভীরে আজও পত্রিকা লিখি,
তোমাকে নয়, এই রাষ্ট্রকে।
লোকেরা বলে, “ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে।”
আমি হাসি—পাগল হতে সাহস লাগে,
ভালোবাসা লাগে, স্বপ্ন ভাঙার অভিজ্ঞতা লাগে।
ওরা জানে না—
এই সমাজে ঠিক মানুষ হয়ে বেঁচে থাকাটাই বোকামি।
আমি জানি, একদিন হয়তো পড়ে রব—
কোমল দুর্বা ঘাসের বুকে,
কিংবা মাঠের মাঝখানে,
আমার পকেটে থাকবে এক টুকরো কাগজ—
তাতে লেখা থাকবে:
"এই দেশ আমাকে ডাকেনি,
আমি নিজেই গিয়েছিলাম,
আমাকে ঠেলে দিল—
এক অসমাপ্ত মৃত্যুর দিকে।"