তুমি এসেছিলে মেঠোপথ ধরে—
একটা কুয়াশাভেজা ভোরে,
তোমার কাপড়ে ছিল রক্তিম লাল সূর্য,
চোখে ছিল দীর্ঘশ্বাসে মোড়ানো একটা কবিতা।
আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম ইস্তানবুলের পুরনো শহরে,
একটি বইয়ের দোকানে,
যেখানে প্রতিটি বইয়ে জড়ানো ধুলোমাখা স্মৃতি।
তোমার হাত ছুঁয়ে গিয়েছিল আমার বই,
আর আমি ভুলে গিয়েছিলাম,
ভালোবাসা কখনো অনুমতির অপেক্ষা করে না।
আমরা কথা বলতাম তিনটি ভাষায়—
শুধু হৃদয় একটাই ছিল,
তবু, প্রতিটি শব্দে হারিয়ে যেত,
সমাজের শত শত অদৃশ্য শিকল।
তুমি বলেছিলে—
“চলো, কেবল হাত ধরে হেঁটে যাই,
জীবনের সব প্রান্ত ধরে,
যেখানে কেউ আমাদের প্রশ্ন করবে না…”
আমি হেসেছিলাম—
ভয়ে, ভালোবাসায়, ভবিষ্যতের নীরবতায়।
আর তুমি চোখ নামিয়ে বলেছিলে—
“ভালোবাসা যদি সীমান্ত পেরিয়ে না যেতে পারে,
তাহলে সে কি আদৌ ভালোবাসা?”
আমরা পালানোর দিন ঠিক করেছিলাম।
বার্সেলোনা, প্ল্যাটফর্ম নম্বর ছয়।
বৃষ্টি নামছিল,
আমার হাতে টিকিট,
তোমার হাতে শেষ চিঠি।
কিন্তু তুমি এলে না...
ট্রেন এল, শব্দ করে পাশ কেটে গেল,
মানুষ এলো, কোলাহল এলো, এলো রঙিন স্বপ্ন—
কিন্তু তুমি এলে না।
আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম...
হাতে দুই টিকিট—
একটা ভিজে যাচ্ছিল বৃষ্টিতে,
অন্যটা জ্বলে উঠছিল চোখের জলে।
ঘণ্টাখানেক পর প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হয়ে গেল—
শুধু একটা ফেলে রাখা চিঠি বাতাসে নড়ছিল,
তাতে লেখা ছিল—
"ভালোবাসা দিয়ে হয়তো ভুল করেছিলাম,
কিন্তু তুমিই ছিলে আমার সবচেয়ে সঠিক ভুল…"
সেই থেকে আমি চিঠি লিখি বাতাসে,
নাম ছাড়া, ঠিকানা ছাড়া, ভাষা ছাড়া।
বেদনায় মোড়া সুরে বলে যাই—
“তুমি সুখে থেকো,
আমার সমস্ত কান্না যেন তোমার ঘুমের আশীর্বাদ হয়ে নামে..."
আর আমি?
আমি এখন সেই প্ল্যাটফর্মে
একটা অদৃশ্য যাত্রী,
যে শুধু এক চিঠি বাহকের ন্যায়—
তাকে জানানোর প্রবল ইচ্ছায়;
যেটাতে লেখা থাকবে:
“আমি এসেছিলাম বার্সেলোনায়…”