সেদিন আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম ভাগনাডিহির মাঠে,
তীর ধনুক, ধামসা-মাদোল, লাঠি-বল্লম হাতে।
সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব আর আমরা সবাই দাঁড়িয়ে ছিলাম।
প্রতিবাদের ভাষা ছিল মাদল নাগড়ার বাদ্যি,
আর সেই শব্দেই তোমরা ভয় পেয়ে গেলে।
নিয়ে আসলে হাতি ঘোড়া, বন্দুক- কামান।
অসম যুদ্ধে একে একে প্রাণ গেল আমাদের।
কামানের গোলার আওয়াজে ঢেকে গেল মাদোলের বোল।
কিন্তু সেদিন একবারও কি তোমরা জানতে চেয়েছিলে
কেন আমরা জোট বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলাম?


আমাদের দামিন-ই-কোহে আমরা ভালই ছিলাম,
জঙ্গল কেটে নিকিয়ে-চুকিয়ে ছবির মত সুন্দর গ্রাম বানিয়েছিলাম।
মাটির দেওয়ালে মারাংবুরুর আলপনাও আঁকা ছিল।
শাল জঙ্গলের মাঝখানে শান্তির নীর ছিল পাড়া গুলো।
জাহের থানে ঠাকুর পুজো হত বছর ভোর।
মাঝিদের কথায় চলত আমাদের মহল্লা।
তারপর একে একে মহাজন দিকুদের শকুন দৃষ্টি পড়ল আমাদের উপর।
মাটি মায়ের বুক খালি করে আনা সোনার ফসলেও ভাগ বসালো ওরা।
জন্ম জন্মান্তরেও বাবুদের সুদ আর আসল শোধ হয়না,
বাবুদের অঙ্কের মারপ্যাচ আমরা ভাল বুঝিনা,
তাই আমাদের ধারও মেটেনা।
বাপ ঠাকুরদার ঋন বেড়ে বেড়ে মারাংবুরুর থেকেও বড় হয়েছে।
ভিটে মাটি হাল-বলদ সব গিয়ে বউ-বেটির ইজ্জত দিয়েও তা মেটে না বাবু।
তাই তো ঠাকুর বরপুত্র হিসাবে পাঠালেন সিধু-কানুদের।
অত্যাচার আর সইতে না পেরে দা-কাস্তে লাঠিসোটা যা আছে তা নিয়ে রুখে দাঁড়ালাম তাই।
রোজ রোজ মরার চেয়ে একে বারেই মরে যাওয়া ভাল।।


যা বাবুরা, ভাগনা ডিহির মাটি শুকে দেখ,
এখনও রক্তের গন্ধ লেগে আছে, ধনুকের ছিলা পড়ে আছে,
আর মাটি খুঁড়ে দেখ, আমাদের কঙ্কাল আজও প্রতিবাদ করছে।
এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতা দিবস,
ধামসা মাদোলেও যে বিপ্লব হয় তা জানানোর দিন।
আমরা আছি রে বাবু,
সিধু-কানু-মারাংবুরুর জন্য বেঁচে আমাদের থাকতেই হবে।