নতুন জামা, স্কুল ব্যাগ আর নতুন জুতো,
এসবের অধিকারে আমি বঞ্চিত।
বড় হলেই আমাকে দিতে হবে বিয়ে,
মা বলতেন ‘লাভ নেই তোকে পড়িয়ে’।
তবুও আমায় পাঠানো হল গ্রামের স্কুলে,
আমার পড়ার খোঁজ নিতে সবাই গেলো ভুলে।
হেঁসেলে মায়ের সাথে ফাই-ফরমাশ খেটে,
শৈশবের দিন গুলো গিয়েছিল কেটে।
আমি তখন ক্লাস এইট বাবা বললেন ডেকে,
‘মা, তুমি বড় হচ্ছ পড়া বন্ধ এবার থেকে’।
শেয়ালের ভয়ে আমার পায়ে পড়ল বেড়ি,
তখন থেকে বাপ দাদাদের সেবা যত্ন করি।
বড় হয়েছি, তাই এবার বিদায় করার পালা,
ভাল ছেলের দাম মেটাতে বাপ-দাদাদের জ্বালা।
মুখ বুজে সব সহ্য করি রক্ত ক্ষরণ বুকে,
ভেবেছিলাম স্বামীর ঘরে থাকব অনেক সুখে।
বড় দুঃখে ঘর ছেড়ে পরকে আপন করে-
বেশ ছিলাম ভাত কাপড়ে আমার স্বামীর ঘরে।
আমার নেশা কাটলে স্বামীর অন্য নেশায় মন,
নেশার ঘোরেই হারিয়ে গেল আমার প্রিয় জন।
যৌবনটাই বড় শত্তুর এখন আমার কাছে,
শ্বশুর, ভাশুর, পড়শিরা সব ওঁত পেতে আছে।
ওরা আমায় বলল – ‘এ স্বামী খাওয়া ডাইনি,’
বিশ্বাস করুন, আমি স্বামীকে খাইনি,
আপনারা বিশ্বাস করুন......।


মাঝে মাঝে মনে হয় – এ কোন অভিশাপ,
মেয়ে হয়ে জন্মানো সত্যিই কি পাপ?
অথচ, তোমরাই বল – নারী সকল শক্তির মূলে।
হে, আমার সমাজ এসব গিয়েছ ভুলে?
এমন সময় পাশের পাড়ার স্বনির্ভর দল,
আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমায় যুগিয়েছিল বল।
ওদের দেখে দল গড়েছি আমরা সবাই মিলে,
সঞ্চয়ী তহবিল গড়েছি আমরা তিলে তিলে।
আর অনাচার সইবো না, মানবো না অবিচার,
স্বনির্ভর দল দিয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার।
পথের দিশা দেখাবে আজ নতুন ভোরের আলো,
সবার মনে সে আলোর দীপ শিখা জ্বালো।