চলাে দীপক, আর একবার ধলভূমগড়ে যাই
বালিশ দিয়ে চোখ চাপা, শক্তি বলল
                                         ভাস্করটাকে নেবে না? শংকর, শংকর, তুই এবার অন্তত চল, কোনােদিন যাসনি
দু'হাত নেড়ে শংকর বলল, ট্রেন আমার সহ্য হয় না
শক্তি ওকে লাথি কষিয়ে বলল, দে শালা সিগারেট
সন্দীপন মিচকি হাসছে, ও নিজে যা করতে পারে না
            শক্তিকে তা করতে দেখলে দুশাে মজা পায়
শরৎ চাপড়ে দিল তারাপদ’র কাঁধ, বাদাম ওড়াচ্ছে সমরেন্দ্র
পলিমাটির মতন সরল মুখ করে শ্যামল বলল,
                                         তােরা আমায় নিবি না?
সবাই জানে, নিতে চাইলেও শ্যামল যাবে না, এক্ষুনি
শেষ ট্রেনে পাড়ি দেবে চম্পাহাটি
                    পেটি বুর্জোয়া রয়ে গেলি, ক্লাস ষ্ট্রাগল
                                    কিছুই বুঝলি না
দীপেনের থুতনি ধরে চুমু খেয়ে বিমল বলল, মান্তু, মান্তু,
           আমি ভাই আমার বউকে নিয়ে যেতে পারি?
সবাই সমস্বরে বলে উঠল, না, না, না...


আমি সমীর রায়চৌধুরীকে বললাম, আর কেউ না যাক
                  তুই আর আমি যাচ্ছিই
পাশ থেকে ভুস করে মাথা তুলে শক্তি বলল, আমাকে
                                        বাদ দেবে, অ্যাঁ
                                        সব ভুষ্টিনাশ করে দেব
ওকে জিজ্ঞেস করলাম, বলাে তাে, ধলভূম জায়গাটা ঠিক কোথায়?
ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে শক্তি বলল, সবাই জানে,
                      মেঘালয়ের একেবারে বুকের মধ্যে
সেখান থেকে ধলভূম পালিয়ে গেল না উত্তর কাশীতে?
বিশাখাপত্তনেও একদিন ধলভূমগড়কে দেখেছি
কে যেন বলল, ধলভূমগড়ের নাম বদলে এখন
                                              হয়ে গেছে চাঁইবাসা
তারপর আবার এফিডেভিট করে হয়েছে দিকশূন্যপুর
বিসর্জনের বাজনার সঙ্গে একলা একলা গান গাইছে দীপক
দীপেন আর বিমল বেশ অনায়াসে কাঁধ ধরাধরি করে
                                            হাঁটছে কুয়াশার মধ্যে
যেখানে জঙ্গল ছিল, সেখানে পাথর ফাটছে, নদীর ধারে
                         শক্তি বসে আছে জলে পা ডুবিয়ে
চমৎকার জ্যোৎস্না ছিল, হঠাৎ নদীটা উত্তাল হয়ে
ছাপিয়ে যেতে লাগল দু'তীর
আঃ এত অন্ধকার কেন? এটা কি ব্রহ্মপুত্র নাকি?
দাঁড়া, শংকর, আমি উঠে এসে আলাে জ্বালছি।


(কাব্যগ্রন্থ- ভোরবেলার উপহার )