টু-লেট্
--- সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী
প্রিয়তমা,
আজ পছন্দের বাড়িটি দেখে এলাম !
ওই যে যেটা ভাড়া দেওয়া হবে বলে " টু-লেট্ " ঝুলছে দেখে
তুমি চমকে উঠেছিল !
মালিকের সাথে কথা বলে মোটামুটি একটা দফা-রফা করে এসেছি।
মাসিক ভাড়া পঁচিশ হাজার , তিন মাসের অ্যাডভান্স ;
জল আর আগুনের বিল আলাদা।
ভাবছি, সামনের মাসেই উঠে যাবো।
গুছিয়ে ফেলো তোমার এই ছোট্ট খুপরি।
এখন থেকে আমরা জমিদার বাড়িতে গিয়ে উঠবো।
একটা জমিদারি জমিদারি ভাব নিয়ে হাঁটবো !
তোমার পরনে থাকবে ঢাকাইয়া তাঁতের শাড়ি ,
লম্বা এক ঘোমটা , লাল সিঁদুরের পথরেখা।
শাহজাদী পানের লাল রঙে
রঙিন থাকুক তোমার ঠোঁট।
বাড়িটা একেবারে নিরিবিলি পরিবেশে !
বাড়ির ত্রিসীমানায় কোনো লোকবসতি নেই।
চারটা বেডরুম, দুটো ডাইনিং, দুটো পাকশালা !
প্রতিটি বেডরুমে এটাচড বাথ,
মাঝে মাঝে ট্যাপ থেকে একা একাই পানি পড়ে!
ও তেমন কিছু না !
বিদ্যুতের লাইনে কিঞ্চিত সমস্যা আছে,
বাল্ব আর ফ্যানগুলো নিজে থেকে চালু হয় আবার বন্ধ হয় !
বাড়ির বিভিন্ন কোণ থেকে সুন্দরী মেয়েদের হাসি
আর নূপুরের শব্দ শোনা যায় !
বাড়ির ছাদে বসে গভীর রাতে কে যেন কাঁদে !
একটি কালো বেড়াল বাড়িটির বহুদিনের বাসিন্দা।
সে প্রতিদিন রাতে কোথা থেকে জানি হাজির হয় !
দিনের আলোতে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাড়ির পাশে একটি শতবর্ষী বট গাছ রয়েছে,
ওটার কোটরে কিছু শেয়ালের বাস।
সাবধান! রাতের বেলা ওদের বেরসিক হুক্কা হুয়া রবে
তোমার পিলে চমকে যেতে পারে।
ভয় নেই , আমি তো পাশে আছি , থাকবোই।
ভালবাসাকে ভয় দিয়েই জয় করতে হয় বধূয়া।
মাত্র মাস ছয়েক আগে বাড়িওয়ালার অপ্সরা মেয়েটা
গাছে দোপাট্টার গিরুতে গলায় ফাঁস দিয়েছে;
ভালবাসার মানুষটিকে পায়নি বলেই
অভিমানে এমন কান্ড ! কি বোকা মেয়ে ?
পূর্ণিমার রাত্রে ও নাকি তাঁর বাবাকে দেখতে আসে
বাবার চোখ দিয়ে কি এখন জল ঝরে
নাকি ভালবাসা মেনে না নেওয়ার আগুনচোখ ?
গান শুনিয়ে যায় মায়ের কানে কানে
আবার নাকি আসবে , দু'হাত ভরে
ভালবাসা নিয়েই নাকি বাড়িতে ফিরবে।
বাসাটা অনেক পছন্দ হয়েছে আমার
ভালবাসা পাওয়া না পাওয়ার কান্না
আর নতুন করে সাহস বুকে নিয়ে
আবার ভালবাসার ঘর বাঁধা
দুটোই পাওয়া হবে আমাদের।
এসো, আমরা নতুন করে শুরু করি
আসছে নতুন নববর্ষেই শুরু হউক
সাহস বুকে নিয়ে ভালবাসার শুভযাত্রা।