পরিণতি
————-
       সুপ্রিয়া চৌধুরী
——————
কোথায় গেলো রূপকথার ওই
ছোট্ট জগৎ,
শুয়োরাণী,—দুয়োরাণীর ব্যথা ?
কোথায় গেলো শুকতারা
আর ছবিতে, অমর চিত্র কথা ?


সময় কেটেছে এই সব পড়ে
আমাদের ছোটবেলা,-
পুতুল বিয়ের নানান সাজে
চলতো তখন খেলা।
এক ই বাড়ীতে কত লোকজন,
মনে হতো যেন উৎসব !
বড়দের ছিল ফাই-ফরমাশ্
— ছোটদের ছিল কলরব !


রকমারি খাওয়া, ঝকমারি আড্ডা
হাসি, খেলা আর  হৈ চৈ,-
সে একান্নবর্তী পরিবারের নজির,
আজ মেলা ভার, সে আর নেই ।


এক সাথে থাকলে হাফ্ ধরে আজ,
প্রাইভেসি খুব প্রয়োজন,-
অতিথি এলে শিশু ও শুধোয়,
ক’দিন থাকবে, কিভাবে থাকবে
কিংবা শুধোয়, অতিথি থাকবে ক’জন ?


বদলে গিয়েছে পৃথিবী আমাদের,
বদলে গেলাম আমরা,-
বদল হবেই,—এ, যে অনস্বীকার্য
উপায় ত নেই এ ছাড়া !


বদলের চাপে ‘মানবিকতা’, ‘মূল্যবোধ’,-
শুধু ‘শব্দ’ হয়েই স্থান পেয়েছে
আজ বাংলার অভিধানে-
স্বার্থপরতা তুঙ্গে এখন !
—এ পরিণতির কোথায় যে শুরু,
কোথায় বা শেষ-
—-এই কথা কেই বা জানে !


পরিবার বলে কিছু নেই আজ
গড়ে উঠেছে তাই বৃদ্ধাশ্রম !
একটু শান্তির খোঁজে,  বুড়ো চোখ গুলো
ঝাপসা হয়ে যায় অনুক্ষণ।


নিঃসঙ্গতা গ্রাস করেছে
ছোট্ট শিশুর শৈশব-
সেই হই হই করে, ধূলো কাদা খেলা,
নেই আজ আর, -কে নেবে দায়,
পিতা, মাতা,- না কি অভিবাবক ?


সময় যে নেই কারোর কাছেই
দোষারোপ করার ও নেই অবকাশ-
প্রগতি এসেছে, ছুটতে হবেই,
বিকল্পের কথা ভাববে কে, বা, কারা
তা’তে ও সময় যে চাই এক রাশ !


প্রগতি আসুক, উন্নতি হোক্,
সমাজ সেটা ই চায়-
তবে স্বার্থপরতার গণ্ডী পেরিয়ে
পরিবার, কিংবা সমাজের প্রতি
সবার ই কিছু আছে দায় !


মানুষ যেন আজ এক যন্ত্রমানব,
মান, হুশ, হীন মেশিন !
প্রকৃত অর্থে,  সে ও ত সুখী নয়-
উপার্জন, যশ, উন্নতির পিছনে
ছুটেই  চলেছে রাত-দিন।


‘ছোট পরিবার, সুখী পরিবার’
—সুখ আর এলো কই ?
পরিবারে ত শুধু  -এক, দুই জন,
খুব বড়জোর, তিনজনাতেই রয় !


বন্ধন গুলো শিথিল হয়ে গিয়ে
সমাজ আজ জরাজীর্ণ,
কোনো সুস্থ সমাজের কাছে
এ নির্মম পরিণতি,
      —-কখনো ই নয় কাম্য !


খুঁজে নিতে হবে সমন্বয়- সামঞ্জস্য,
পারিবারিক, কিংবা কর্ম জীবনে,—
যা হবে, একমাত্র সমাধান !
দায়িত্ববোধ জাগবে তবেই,
কর্মে জাগবে, চিন্তা- চেতনা,-
প্রগতির পথে,
এটাই মানুষের, হবে, সফলতার
প্রথম সোপান।
—————————————-