আর যাই হও,
যদি তুমি মেয়ে হও,
খেলাচ্ছলে তোমায় দেওয়া হবে রন্ধনশালা।
পুতুলের সংসার হবে তোমার প্রথম মেয়ে হয়ে উঠার পাঠশালা।


যদি তুমি মেয়ে হও,
তোমার স্বরে থাকবে নম্রতা, ভাষায় মোহন মিষ্টতা,
তোমায় হতে হবে শান্ত শীতল, ঠিক যেমন মার্জিত দখিনা হাওয়া। তোমায় হতে হবে বাধ্য পোষা পাখিটির মত।


যদি তুমি মেয়ে হও,
ওরকম গলা ফাটিয়ে হাসা চলবেনা,
চলবেনা ওরকম দুপদাপ পা ফেলে হাঁটা,
তোমার হাসি হতে হবে তাপহীন রোদ্দুরের মত,
চলন হতে হবে মোলায়েম, শব্দহীন,
বেড়াল যেমন মখমলি পশমী পা ফেলে হেঁটে চলে।
নয়তো জুটবে অলক্ষ্মীর শিরোপ।


যদি তুমি মেয়ে হও,
পইপই করে শুনতে হবে সব বারণ,
বাড়ি ফিরতে হবে সন্ধ্যের আগে,
আপাদমস্তক ঢাকতে হবে পোশাকের মোড়কে,
নয়ত চন্দ্রসূর্যের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হবে তোমার অনাবৃত দেহাংশ, হবে সর্বাধিক আলোচ্য আর সমাজিক অবক্ষয়ের প্রধান কারণ।


যদি তুমি মেয়ে হও
ভয়ের সাথে সখ্যতা করতে শেখো,
বরং তুমি দুঃসাহসের গলাটিপে নিজেকে পঙ্গু করতে শেখো,
তোমার রক্তের সাথে মিশে যে দিন ভয় দৌড়াবে, সে দিন ভেতর থেকে নিজেকে মেয়ে মেয়ে অনুভব হবে তোমার।


যদি তুমি মেয়ে হও,
প্রতিমাসেই তুমি হয়ে উঠবে অশুচি।
তখন তুমি পুজোতে অপবিত্রা, রান্নাঘরে নিষিদ্ধা,
শুচিতার লক্ষনগণ্ডী তুমি তখন পেরোবেনা।
তবেই তুমি মেয়ে হয়ে ওঠার সব শর্ত পালন করবে।


যদি তুমি মেয়ে হও,
তোমার সহ্য শক্তি হতে হবে মাপজোকহীন বেশি, হতে হবে বৃক্ষের মত ধৈর্যশীল, ভাবলেশহীনভাবে থাকতে হবে সমস্ত যন্ত্রনা শুষে নেবার ক্ষমতা,
নয়তো মেয়ে তুমি মেয়ে হতে পারবেনা।


মেয়ে তোমায় যেন ক্লান্তি না ছোঁয় , ঐ যে আকাশ দেখছ, তোমায় হতে হবে তেমন দায়িত্ববান, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ছাঁচে ঢেলে দিতে হবে নিজেকে।


যদি তুমি মেয়ে হও, আর যাই হও না কেন, মানুষ হওয়ার আগে, তোমায় আরোও অনেক বেশি মেয়ে হয়ে উঠা শিখতে হবে।