গভীরে তোমার সুখের কতো যে বিচ্ছুরণ!
দুঃখও করে সম-অধিকারে বসবাস;
আলোকে যেমন কাছে টেনে নাও আন্তরিক,
আঁধারও তেমনি ঠাঁই পেয়ে গেছে অনায়াস।


শরীরে তোমার যেমন জেগেছে পঞ্চবাণ,
যেমন জেগেছে শরীরে তোমার রিরংসা,
তেমনি জেগেছে মানবিকতার প্রশংসা,
তেমনি জেগেছে জিতেন্দ্রিয়ের পরম-ধ্যান।


শরীরে তোমার যেমন জেগেছে প্রভঞ্জন,
জেগেছে যেমন ভুবন কাঁপানো অট্টহাস,
তেমনই জেগেছে মহামানবিক কোমলতা,
তেমনই জেগেছে গভীরের বানী- নবজীবন।


তরঙ্গ-শোভা মনে জাগে দেখে সমুদ্দুর,
অদূরে মৌন দাঁড়িয়ে রয়েছে মেদিনিধর;
অন্তরে জাগে মহাজাগতিক অচেনা সুর,
অরন্য, নদী দৃষ্টিতে জাগে পরস্পর।


বড় বেদনায় বুকে ধরে রাখো অষ্টনাগ!
বড় বেদনার ক্ষত হয়ে আছে বলাৎকার;
তাই কি তোমার দিন কেটে যায় রুদ্ধবাক,
তাই কি তোমার দুচোখ ভরেছে অশ্রুতে?


প্রতিদিন আমি তোমাকেই দেখি সবিস্ময়,
রাত কেটে যায় তোমার নিবিড় বন্ধনে;
জাগ্রত তুমি, প্রকাশিত তুমি নিরন্তর,
তুমি সৃষ্টির ফসলের মতো মৌন-স্বর।


অন্তরে তুমি জেগে আছো হয়ে  কাব্য-রূপ,
মহাজাগতিক ধ্যানে শব্দরা হয়েছে চুপ।
গভীরে তোমার সৃষ্টিকালিন স্তব্ধতা,
বুকে ধরে আছো অনাদিকালের সারাৎসার।


তুমি শিখিয়েছ অর্থেরও আছে নানার্থ;
তুমি শিখিয়েছ অনর্থ নয় অর্থহীন;
পিপাসুর কাছে প্রত্যহ তুমি অর্বাচীন,
-যুগযুগান্তে আকর গ্রন্থ; আলোকময়।


এই ভালো, নিয়ে বসে থাকি বুকে, অনর্গল
কথা কয়ে যাও, কথা বস্তুত কাঙ্খা-ফল;
এই ভালো, নিয়ে বসে আছি বুকে, আন্তরিক,
-কথোপকথনে আলো হয়ে যাক দিগ্বিদিক।  


তুমি আছো তাই জগত ভরেছে সুরসুধায়,
আমিও পেয়েছি কাঙ্খিত শত অন্ত্যমিল;
স্তোত্র-মালার প্রতি পুষ্পিত আলেখ্যে
জাগ্রত তুমি- চির নমস্য শব্দ-প্রাণ।


                     ২
দিকে দিকে তুমি ছড়িয়ে দিয়েছ শব্দজাল,
দিকে দিকে ধায় অবিনশ্বর ছন্দ-তাল।
নাচে আনন্দে প্রকাশিত আর অন্তরাল;
তুমি অপরূপ বিজনে রয়েছ আত্মলীন।


আকাশে ফুটেছে ফুল শোভা বড় নান্দনিক।
তারকা ছুটেছে আপন খেয়ালে চালকহীন।
খেয়াঘাটে একা বসে আছে কোন নৌজীবিক,
না কি বসে আছে জগতের হিতে দার্শনিক?


তুমি কোন ধ্যানে মগ্ন রয়েছ ঋষিপ্রতিম?
শৈলশিখরে কথামালা জমে হয়েছে হিম।
তুমি কোন জ্ঞানে ধারণ করেছ নীরবতা;
ভেবে চলেছ কি অন্তরে একা ‘অতঃ কিম্’?


সময় সরনি পান করো তুমি বিদ্যাধর;
সময়ের কাছে করেছ নিজেকে সমর্পণ।
তোমাকেই শুধু কাছে পেতে চাই, হে দর্পণ;
রুপময় কী যে শোভনীয় তুমি সুদর্শন।


সূর্য-সোদর অপাপবিদ্ধ বিহঙ্গম-
শব্দের সাথে হয়েছে তোমার কি সঙ্গম?
যদি এসে যায় শব্দ-শিশুর প্রসঙ্গ,
তুমি কি তাদের স্বীকৃতি দিতে পারঙ্গম?  


( অন্ত্যমিলের ধরনঃ ২,৪। ১,৪;২,৩।১,৪।১,৩;২,৪। ১,৩। ৩,৪। ১,২।২,৩।।১,২;৩,৪। মুক্ত ছন্দ।১,২,৩। ১,৩,৪।১,২,৪। ২,৩,৪। ১,২,৩,৪।)