নিউইয়র্কে আবহাওয়ায় এখনো বেশ শীতের রেশ -- বিশেষতঃ শেষ রাতের দিকে। একটা মিঠে মিঠে শীতের আমেজে ঘুমটাও জমে আসার সময় গড়িয়ে আসতেই বেজে ওঠে এলার্ম -- হতচ্ছাড়া এলার্মের বাপবাপান্ত করে ছাড়তেই হয় বিছানা। কী মুশকিল বলুন তো -- এমন মজার ঘুমের আমেজ ছেড়ে এই ভোর সকালে যত্তোসব ধরাচূড়া পড়ে বেরিয়ে যেতে ভাল লাগে !!


    ভাল লাগুক বা নাই লাগুক -- যেতেই হবে -- সে এমনই এক রজ্জুর টান - না গিয়ে উপায় নেই --মাস শেষে হাজার বিলের তাগিদ, জীবনের নানান চাহিদার দাবী মেটানো --সে হবে কি করে --না গেলে!!  সেই ভোর চারটের বিছানা ছেড়ে পাঁচটার ভিতরেই বেরিয়ে পড়া - অতঃপর ৭০ মাইল ড্রাইভ করে অফিসে পোঁছানো -- তারপর সারাটাদিন কেটে যায় কঠিন রুটিনে নিয়মমাফিক --এই মিটিং সেই মিটিং করে --।।


    সেই বিকেল পাঁচটায় বা ছয়টায় এবার ফেরার পথে --। পথে তখন ফিরতি বেলার তুমুল ট্রাফিক - ।। এরপর ও তো আছেই সংসারের নানান দাবী মেটানোর তাগিদ ।। পান থেকে চুন খসবার উপায় নেই --  জীবনের নিত্যদিনের এমনই কড়চা -- প্রায় সারা বিশ্বব্যাপী অসংখ্য অগুন্তি কর্মব্যস্ত মানুষেরই ।।


    কারো একটু লেখার শখ, কারো বা পড়ার, কারো পানের শখ, কারো বা প্রেমের, কারো বা পাখী দেখার শখ, কারো বা পাখী মারার, কারো বা ঘুরে বেড়াবার শখ, কারো বা কষ্টে অর্জিত অর্থ ব্যাঙ্কে ডিম পাড়ছে তাই দেখে শখ ।
  
    এমন হাজারো শখের মধ্যে কবিতায় যার বাঁচার শখ সে বড় দূর্বিপাকে -- এমন ব্যস্ত জীবনের যাঁতাকলে ।। দৌড়ে দৌড়ে কি আর কবিতা লেখা যায় বলুন, না কবিতা আসরে এসে কবিতা পড়া যায় --! মনের সুখে কবিতা পড়ে একটু মন্তব্য করার সুযোগই মিলে না -- কত কবিতা পড়ার বাকী -- কবে পড়ার সুযোগ হবে -- !!


   মনের গভীরে এক দীর্ঘশ্বাস আকুলিবিকুলি করে ঘুরপাক খায় -- আর শুধু মনে হয় -- কী দাম এই জীবনের -- খাঁচার পাখী বেদম হয়ে চেঁচাতেই চায় -- 'ছেড়ে দে না মা কেন্দে বাঁচি '  !!


    কে কারে ছাড়ে -- কে কোথায় কান্দে'' ।। সময়ের পিঠে পিঠে জীবন বয়ে যায় ।।