_________________


ভদ্রমহোদয়গণ, আপনারা সকলে চুপ করুন এইবেলা
আর কোন কথা বলিতে দেওয়া হইবে না,  
শুধুমাত্র তাঁহাদেরই প্রশংসাবাক্য উচ্চারণ অনুমোদিত
লেখিবার অধিকারও আজ হইতে বাতিল ঘোষিত হইল;
একমাত্র সেই লেখা প্রকাশিত হইবে যাহাতে তাঁহাদের
গুণকীর্ত্তন বিপুল আকারে করা হইয়াছে ।


তাঁহারাই শ্রেষ্ট, তাঁহারাই একমাত্র মান্যগন্য,
তাঁহারা যাহাকে ধর্ম বলেন, তাহাই একমাত্র ধর্ম
এব্যতীত আর কোন ধর্ম নাই, আর কোন মতও নাই ।
তাঁহারা যাহাকে যেইভাবে চলিতে আদেশ করেন
সেইভাবেই তাহাকে চলিতে হইবে -
ইহার অন্যথা হইলেই মুণ্ডপাত সুনিশ্চিত ।


তাঁহারা বলিয়াছেন, এবং তাহাই শিরোধার্য মানিয়া লও
নারীদের কোন সুখ বা দুঃখ থাকিতে পারে না
নারী পুরুষের সেবিকামাত্র - তাহাদের সৃষ্টি শুধুমাত্র পুরুষের
প্রয়োজন মেটানো ও তৃপ্তি সাধনের উপকরণ হিসাবে;
অত:পর, নারীরা ভবিষ্যৎ বংশধর জন্মদানের মেশিন মাত্র ।
তাঁহাদের আদেশ মানিয়া চলাই নারীর একমাত্র ধর্ম
উহা ব্যতীত তাহার আর কোন পরিচয় নাই ।


কবিতা, গল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত নামক সকল কিছুই
কুরুচিকর সাব্যস্তে তাঁহারা এই মর্মে বাতিল করিয়াছেন;
অতঃপর, সকল পাখিদের আস্তানা পোড়াইয়া দেওয়া হইল,
সকল ফুলবাগানেও আগুনের লেলিহান শিখার আয়োজন ।
পাখিদের গান অবাঞ্চিত ঘোষিত হইয়াছে জানিয়া রাখুন ।
ফুল ফোটানোর কোন অধিকারও গাছেদের থাকিবে না
ফল প্রদান চলিতে পারে নারীর সন্তান প্রদানের মতই
তাও একমাত্র তাঁহাদেরই একান্ত প্রয়োজনে ।


শুনিয়া রাখুন ভদ্রমহোদয়গণ- তাঁহারা বলিয়াছেন,
এই ভূমি, এই নদী এই সাগর, এই আকাশ, এই বায়ু
এই বন, এই শস্য, এই গৃহপালিত পশুসকল, এই নারী সকল
সবেতেই একমাত্র তাঁহাদেরই অধিকার - !
কারণ এইসকল তাঁহাদের জন্যই সৃষ্টি করা হইয়াছে
এব্ং জানিয়া রাখুন,
সৃষ্টির আদিকাল হইতেই একমাত্র তাঁহাদের জন্যই
এইসকল সংরক্ষিত হইয়া আসিতেছে ।
অতএব মহোদয়গণ, সতর্ক হওন,
আত্মরম্ভিতা ত্যাগ করিয়া তাঁহাদেরই শরণ লওন ।


এই বলিয়া ঘোষক অত:পর হাতের মুঠো খুলিয়া দিলেন;
নিমেষে সেই হাতের অলক্ষ্য কোঠর হইতে লক্ষ লক্ষ সরীসৃপ
মুখোশে মুখ ঢাকিয়া শাণিত চাপাতি শোভিত হইয়া
সারা দেশে ছড়াইয়া পড়িল -- ছড়াইতে থাকিল --
তারপর হইতে এই দেশে আর সূর্যোদয় হয়নি ;
চন্দ্রের নরম আলো সেই দেশে আর কেউ দেখার সুযোগ পায়নি
নিকষ অন্ধকারের নষ্টজলে ডুবিয়া থাকিয়া
সেই তাঁহারা মহানন্দে রাজত্ব করিতে লাগিলেন ।
  
                    --০--