হায় আমাজন পোড়ো তুমি পোড়ো
বিবর্ণ সভ্যতার কাছে পরাজিত হয়ে পোড়ো।
তোমার বুকের ভেতর আকড়ে আছে পৃথিবীর নিঃশ্বাস
আর ছোট্ট জোনাক পোকাটির নিভুনিভু আলো
পোড়ো গাছের ফোকর দিয়ে আসা কল্লোলিত আলো
পোড়ো যেভাবে পোড়ে কাঠকয়লা ধ্বংসের উল্লাসিকতায়।
পৃথিবীর অর্থনীতি আজ নাচ্ছে লোলুপ সাম্বা নৃত্যে
আজ থেকে শত বর্ষ কিংবা তারচে একটু বেশি পড়ে
এই এনাকোন্ডার মতো আঁকাবাঁকা নদীটির কিছু রেখা আঁকা রবে এই ধূলি বালুময় ধূ ধূ প্রান্তরে।
এখানে একটা গাছ ছিল
ছিল গাছেদের ভাই, বোন, মা, আত্মীয়, পরিজন
গাছেদের শুষ্ক শরীরে প্রেয়সীর মতো জড়িয়ে থাকতো
সাপেদের নরম শরীর আর তাদের গর্ভ থেকে টিপ টিপ করে চোখ মেলতো ছোট্ট কাঠবিড়ালি
ওইযে ওখানে প্রতিদিন শেষ বিকেলে বৃষ্টি হতো
জন দশেক ওরাং ওটাং বৃষ্টি ভিজতো আর হিসেব কষত
বিবর্তনের সভ্যতার। এখানে এই টোপাপানায় ঘেরা নদীটির বুকে প্রতিদিন চাঁদের মৌতাত পোহাত শিকারি কুমির, তার মুখখানা হা হয়ে থাকতো চতুরতায়।
বুনো শেয়ালের দল খুঁজে পেয়েছে কী কোন আদিবাসী গ্রাম।
হায় আমাজন পোড়া তুমি পোড়
সভ্যতাকে সংগে নিয়ে পোড়ো
এখানে এই ছোট্ট ডোবাটির ভেতর প্রতিদিন চাঁদ উঠতো নতুন শিশুর মতো হাসিমুখ নিয়ে
আজ চাঁদও যাচ্ছে পুড়ে সনাতন ভংগিতে
মানুষ যেদিন প্রথম আগুন জ্বালাতে শেখে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল সভ্যতা সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল ধ্বংস।
এখানে ওই ঝোপেড় ধারে কয়েকটা কাঠের ঘর ছিল
কিছু অর্ধনগ্ন ণৃবাসী রাতের বেলায় গোল হয়ে হরিনের মাংস পোড়াতো আর তাদের জাতিভাষায়
পা দুলিয়ে দুলিয়ে নেচে নেচে গান গাইতো।
আগুনের দাবদাহে জংগল ছেড়েছে কেউ
কেউ পুড়ে মরেছে আদিম টানে
সবচেয়ে বুড়ো যে ভল্লুক দলছুট হয়ে
হয়তো গুনছে ধোয়ার কুণ্ডলী।
হায় আমাজন তুমি পোড়নি
আমাদের বুকের ভেতর তোমার ছবিটি আছে
এখনো তেমনি আঁকা কার সাধ্য আছে তোমায় পোড়ায়
পুড়েছে সভ্যতা, পুড়েছে নিঃশ্বাস, পুড়েছে সুন্দর।