এক.
কুলি.... এই কুলি কুড়গাঁ যাবি
নগদ নগদ দশটি টাকা পাবি
কর্তা, অধমের যে ছিল একটা দাবি,
বুঝেছি পথের মাঝে তামাক বিড়ি খাবি
ও হবে, ও হবে
আমি রাজি তবে।
মালগুলোন সব তুলে নে তোর ঘাড়ে,
একটুও কিন্তু পিছন ফিরিস নারে
কুড়গাঁ তিন মাইল পথ কম কথা নয়
এক মাইল পরে..
হুজুর অধমের যে একটু থামতে হয়,
ব্যাটা কোন থামাথামি নাই সোজা হাটা ধর
কর্তা শুকিয়ে কাঠ গলা,
উছিলা পেয়েছিস ব্যাটা; তুই মর তুই মর,
ওইতো সামনে দেখা যায় আমার বাড়ি
আর একটুখানি, হাটা দে তাড়াতাড়ি।
কর্তার বাড়িতে...
এই কে আছিস মালগুলো তুলে নে
এক্ষুনি এই কুলিকে বিদায় দে।
ওপরের বৈঠক; কর্তা হরিদাসকে-
এই দশ টাকা দিস কুলিকে
কর্তা আমার ফিস,
যদি পারিসতো নিস।
এই ব্যাটা কুলি এদিকে আয়
বাবু তেষ্টায় যে বুক ফেটে যায়।
যদি দিতেন মুড়ি তার সাথে একটু জল,
জল পাসনা আবার মুড়ি, খা ব্যাটা মল।
এই ধর ব্যাটা
খেয়ে তৃষ্ণা মেটা।
কর্তা এবার দিয়ে দিন আমার ফিস
যা ব্যাটা এখান থেকে পরে এসে নিস।
কর্তা পাওনা বুঝিয়ে দিন তাড়াতাড়ি
দুর ছাই ভাগ, করিসনে বাড়াবাড়ি।
ঠিক আছে ঠিক আছে, এই নে পাঁচ টাকা
পাঁচ টাকা! পানির দামটা দেবে তোর কোন কাকা।
আরো পাঁচ টাকা সাথে দিন বকশিস
বলে কি? ওরে বাবা, মর ব্যাটা খেয়ে বিশ
যা দূর  হ এখান থেকে
মারতে আসে চামচা হেঁকে
এই শেষ বলছি দিয়ে দিন টাকা মশাই,
তুইতো দেখছি আস্ত পাজি, মস্ত বড় কসাই।


দুই.
গাঁয়ের একটু দূরে শেঠজীর পাঠশালা
মাসের বিশ দিনই ঝুলে তালা
শেঠজী মশাই ভীষণ কড়া
চোখ পাকিয়ে ধরেন পড়া
পাঠশালায় এসেছে সব ছাত্র
শেঠ মশাই ঠুকলেন এই মাত্র,
এই ছোটন, বল কি পড়া ছিল আজ?
জনাব দিয়েছিলেন বাড়ির কাজ,
সকলেই বস ধরব এখন পড়া
বলবি সবাই নোটন নোটন ছড়া
বলতো চাষার মূর্খ ব্যাটা কালু
কবে হতে বাষ্পযান হলো চালু
পারছিস না, থাক ব্যাটা দাঁড়িয়ে
কেন যে আসিস জল কাদা মাড়িয়ে!
শেঠজী মনে মনে কি যেন ভাবে
চাষার ছেলে আজ কোথায় যাবে
চাষার ছেলে বিদ্বেন হতে চায়
দেখতে ব্যাটা কুৎসিত কৃষ্ণকায়
বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পেটাবো ওকে ঢের
বিদ্বেন হওয়ার শখটা পাবে আজ টের;
জনাব ওটা লেখাননিতো নোটবুকে
ওকি সাহস! কথা বলিস মুখে মুখে
এই বলেই তাকে দেয় ভীষণ মার
কি আমার কাছে পড়তে আসবি আর?
এই ছুড়ি পড়া বল
দেখেছিস ওর ফল?
খামোস বেয়াদব আমার নাম শুননি
চমকে গেল শেঠজী, কে তুমি মা জননী
এ গাঁয়ের মোড়ল আমার পিতা
নাম আমার সুস্মিতা।
মা জননী! গুসতাখি মাফ করে দিবেন
এই অধমের কসুর মনে না নিবেন,
এবার বলুনতো এই গাঁয়ের নাম কি?
এতো সবাই জানে নবীগঞ্জ ছাড়া আর কি?


তিন.
সানাই বাজছে আলোর ফোয়ারায়
ঝকমকে বিয়ে বাড়ি
দুয়ারের সামনে এসে ভিড়লো
সুসজ্জিত এক গাড়ি,
বিয়েবাড়ি ছিমছাম নানারূপ সাজ
খানিক বাদেই তাতে শিল্প কারুকাজ
এসব দেখতে দেখতে এক পথের শিশু
ঢুকে পড়ে বিয়ে বাড়িতে
নানা খাবারের খুসবু আসছে ভেসে নাকে
চোখ পড়ে তার হাঁড়িতে
দেখা মাত্রই চোখ জুড়ে যায়
ক্ষুধার্ত পেট দুমুঠো খেতে চায়,
সকলের মাঝেই যেন ব্যস্ততা
কে যে আসে যায়, চোখে পড়েনি তা।
ছেলেটি ঢুকলো কনে সাজাবার ঘরে
হাসির ঝিলিকে, খুশির ফোয়ারা ঝরে;
অবাক চোখে ছেলেটি কনে দেখে চুপটি করে বসে
হঠাৎ এক লাথি পিঠে পড়লো তার কষে,
এই কে আছিস বের কর এই জঞ্জাল
এক চড়ে শিশুটি নিস্তেজ, নীলাভ গাল,
বিয়ে বাড়িতে সোনা দানা ভুরি ভুরি
সেইগুলো বুঝি করতে চাস তুই চুরি?
না জনাব হতে পারি আমি গরিব চোর নই,
ও বাবা!  চোরের মায়ের বড় গলা
ফুটছে কথার খই,
বের হ ফকিন্নীর ছেলে
নইলে পাঠাবো তোকে জেলে;
কেঁদে কেঁদে খোকা ছেড়ে যায় বিয়ে বাড়ি
মনে পড়ে তার মাংস পোলাও’র হাড়ি।


রচনাকাল: ৩০/০৪/২০০১ইং