কবিতায় ছন্দমিলের প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে ভিন্নমত আছে। পুরাকাল কিংবা মধ্যযুগে ছন্দমিল ব্যতীত কবিতা ছিল অচিন্তনীয়। আধুনিক ও উত্তর আধুনিক সময়ে কবিতা অনেকটাই অছন্দনীয় হয়ে উঠেছে। শিল্পযুগ উত্তর সময়ে মানুষ বস্তুবাদী হয়ে উঠায় ভাব ও আবেগের সংস্কার তার একটি অন্যতম কারন।
পুরাকালে দেবতা স্তুতি মধ্যযুগে রাজা মহারাজার গুনকির্তন ছিল কাব্যিকতার মূল বিষয়। সেই সময়ে কবিতা লিখা হত আগে, বিষয় নির্ধারিত হত পরে।
আধুনিক সময়ে মানুষের চিন্তা প্রসারিত হওয়ায় অধিকৃত এই স্থান দখলে আসে মানুষের। মানুষের সামাজিক ,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চিন্তা প্রেম বিরহ আবেগ এমনকি মানুষ ও প্রকৃতি উঠে আসে কবিতায়।
উত্তর আধুনিক সময়ে এটি আরও প্রসারিত হয়। এই সময়ে বিষয় নির্ধারিত হয় আগে,কবিতা লিখা হয় পরে।
পূর্বে স্তুতি ও ভক্তিবাদ যেখানে ছিল কবিতার মুখ্য বিষয় এখন ও এই সময়ে মানুষ ও মানবতাবোধ।
আধুনিক সময়ে এসে আমরা বিষয়ের সাথে কবিতার অন্তরমিল রাখতে গিয়ে ছন্দের খেই হারিয়ে ফেলি। মনে রাখতে হবে কবিতা হচ্ছে একটি শৈল্পিক আর্ট। পুরাকাল কিংবা মধ্য যুগে এই আর্ট মানুষের অন্তর আত্নাকে যতটা স্পর্শ করতে পারত এখনকার এই সময়ে ঠিক ততটুকু পারেনা।
পাঠক কবিতার মূল রস আস্বাদন করে তার শৈল্পিক ছন্দমিল থেকে অনেক ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু গৌন হয়ে যায়। অবশ্য পাঠকের রুচিবোধ এখানে মুখ্য। কবিদের উচিত যথাসম্ভব বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে ছন্দমিল বজায় রাখা।
আবার ছন্দমিলের জন্য বিষয়বস্তু থেকে সরে যাওয়াও ঠিক নয়।
ভালো বিষয়বস্তু ও ভালো ছন্দমিল একটি ভালো কবিতার জন্ম দেয়। ভালো বিষয়বস্তু ও ছন্দমিলের উত্কর্ষতা যে কবিতায় বিদ্যমান সেটিই হয় কালতীর্ণ বিষয়টি আমাদের মনে রাখা উচিত।