একদা দূরপথ যেতে যেতে
বন্ধু আমার জুড়লো অতীত কথা;
শিক্ষার তরে কেটেছে দুঃসময়
পেয়েছে কতই দুঃখ-লাঞ্ছনা-ব্যথা!
পিতা তার পেটাতো তারে
নিয়ে হালের বলদের লড়ি;
পুত্র তার গেলো কেনো স্কুলে
ফেলে লাঙল-জোয়াল-দড়ি?
হাল-চাষ না চালালে
ক্ষেত-যমীনের ’পরে;
ক্ষুধার অন্ন কী করে
আসবে নিজের ঘরে?
দারিদ্র্য যার নিত্য সাথী
ক্ষুধার ডঙ্কা পেটে যার বাজে;
বড়লোকের শখের মতো
লেখাপড়া তার কি কভু সাজে?


তাই, পড়ালেখায় দিয়ে ইতি
ধরে সে লাঙ্গলের খুঁটি;
চাষাবাদে দেয় যে মন
রাখালের সাথে বাঁধে জুটি।
খেলতে খেলতে একদিন সে
হারিয়ে গায়ের চাদরখানি;
খালি গায়ে ফিরে বাড়ি
শুনে মায়ের কড়া বকুনি।
শীতের ভোরে চাদরের খুঁজে
পরের দিন যবে সে বেরোয়;
হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে সে
চা বাগান ম্যানেজারের বাংলো’য়।
জিজ্ঞাসে চাদরখানি তার পেয়ে কেউ
দিয়েছে কি ম্যানেজার সাহেবের কাছে?
তা না হলে সুবোধ বালক
কেমন করে এ শীতে বাঁচে!


খোলা বারান্দায় তখন ভুল অংক করছিলো
ফুটফুটে বালিকা এক বসে;
খাতা নিয়ে অমনি সে রাখাল দিলো
সহজ-সরল-নির্ভুল অংক কষে।
চমকিতে বালিকা শুধায়
রাখাল বালকেরে;
স্কুলে পড়ো কি তুমি-
এ অংক পারলে কেমন করে?
গরীব মানুষ আমি
স্কুলে যাই কী করে;
কাজ না করলে যে আমার
ক্ষুধার অন্ন আসবে না ঘরে!
সাহেব তখন চাদর নিয়ে
অন্দর থেকে বেরিয়ে এলে;
জিজ্ঞাসে বালিকা, কেমন হয় বাবা-
ও, প্রতিদিন আমায় অংক শিখালে?
ঘটনা শুনে ম্যানেজার সাহেব দিলেন
রাখাল বালকেরে গৃহশিক্ষকের ভার;
লেখাপড়ার বাতিক তখন
চড়ে বসে ফের মাথায় তার।
কিছুদিন পর চুকিয়ে গৃহশিক্ষকের দায়
হয়ে যায় সে বাড়ির বা’র;
আত্মীয়ের সহযোগে সুদূর পাঠশালায়
স্থান করে নেয় আবার।


এরপর মেসে মেসে থেকে থেকে
টুকটাক খেটে খুটে;
লেখাপড়ার খরচ কিছু
বাঁধে তার গাঁটে।
এই করে করে একদিন সে বালক
পেরোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুউচ্চ দ্বার;
অতঃপর ক্রমেই হয়ে উঠে সে
অধ্যাপক এক নামদার।


একদা কি এক প্রয়োজন বলে
বাপ-বেটা কোনো ব্যাংকে গেলে;
বাবা ছেলেরে থামায়-
যাসনে বাবা, ‘বড় সাহেবের কোঠায়’।
তবুও ঢুকে সে ম্যানেজারের ঘরে
যেই না দিলো পরিচয়;
সাহেব তখন সাদর আপ্যায়নে
করলেন কুশল বিনিময়।
চকিত বাবা জিজ্ঞাসিলেন শেষে-
আজ একি হলো দেখি বাবা বল?
পুত্র তখন শুধালে বাবা’য়-
বাবা! এই হলো শিক্ষার ফল।


বাবা’র দেয়া শাস্তির সকল কষ্ট
নিজগুণে ভুলে;
আজো রেখেছে সে বাবারে তার
মাথায় তুলে।
বাপেরে দেয় সে যে
অবোধ শিশুর আদর-সেবা;
এমন কদর মা-বাপেরে করেছে
ক’জন কে-বা?
তার কথা ভেবে ভেবে
শ্রদ্ধায় হই আমি অবনত;
বন্ধুই নয় কেবল সে আমার
সে-যে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত!