কেমন একটা অলস বিকেল পেরিয়ে গেল আজ,
সকাল থেকে দুপুর ঝুম বৃষ্টি
আর বিকাল থেকে শুরু হলো
সুঁচের মত চিকন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি।
আর থেকে থেকে হিম হওয়া বয়েই যাচ্ছে।
মাঠ-ঘাট জুড়ে কাঁদা মাটি সতেজ হয়ে উঠেছে দিনভর বৃষ্টিতে।
সন্ধ্যা হয়েছে দুপুরের শেষ প্রহরে,
মেঘেরা সন্ধ্যাকে আজ একটু আগেই
নিয়ে এসেছে নিমন্ত্রণ করে।
ঘর জুড়ে বিদ্যুৎ নেই,
বিকাল থেকে একটানা নিজেকে বিসর্জন দিয়ে
কুপিটা জ্বলেই যাচ্ছে ।
মাঝে মাঝে বাতাসের উপস্থিতিতে
ভয়ে কেঁপে উঠছে অনলের  শিঁখাটা।
ঘরে মোমবাতি ছিলনা,
চার্জার লাইটগুলোও আনা হয়নি ঢাকা থেকে।
ফোনের ফ্লাশ লাইটে অনেক খুঁজে
দাদুর রেখে যাওয়া সে আমলের এই কুপিটাই পেলাম।
মনে পরে গেল শৈশবের কথা।
ছোটবেলায় এই কুপির চারপাশে
আমরা গোল হয়ে বসে দাদুর মুখে গল্প শুনতাম
আর বড়রা পিঠাপুলি বানাতেন।
আজ সে সবের কিছুই নেই।
সবই যেন বহুকালের প্রিয় এক অতীত।
আমরা এই হারানো অতীত গুলোকে
স্মৃতি নাম দিয়ে আরো দূরে ঠেলে দিয়েছি
আধুনিকায়নের দোহাই দিয়ে।
পুরো বাড়ি শূন্য, রাতের নিজস্বতা আর কোলা ব্যাঙের ডাকে
পুরো বাড়িটা এক ভুতেরে পরিবেশে পরিণত হয়েছে।
কিছু লিখবো বলে ডায়েরিটা খুলে বসেছিলাম।
কি লিখবো তা স্থির করতে পারছিলামনা।
টিনের চালের বৃষ্টির শব্দে মনে হচ্ছিল
নুপুর পায়ে কেউ একটানা নেচেই চলছে।
হঠাৎ মনে পড়লো সেই বৈশাখের কথা।
সবুজ ঘাস, কার্জনহল, মেঘে ঢাকা আকাশ
আর মুশলধারে শিলা বৃষ্টি।
মনে আছে তোমার,
আমরা তিনজন কি কাক ভিজাই না ভিজেছিলাম সেদিন।
ঐ একটা দিন।
আমি পৃথিবীর সকল কিছুর বিনিময়েও ভুলতে পারবো না।
সেদিন তুমি আমার সবচেয়ে কাছে এসেছিলে।
তোমার নিশ্বাস আমার বুকে
বারবার আঘাত করছিল হাতুড়ির ন্যায় ।
শক্ত হাতে চেপে ধরেছিলে আমার দুহাত
বারবার বজ্রপাতের ভয়ে।
তারপর কতটা দিন অতিবাহিত হলো,
কতটা রাত সকালের বুকে লুকিয়ে গেল,
কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি কথাটা আর বলা হলো না।