গুটিগুটি পায়ে হাঁটা শৈশবে থাকে ভালবাসা
মায়ের কোলজুড়ে আদরের উষ্ণতায়,
বাবার আলতো চুমুর অপেক্ষায়,
শৈশবের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে ভালবাসা।


শীতের সকালে স্কুলজীবনে মিশে থাকে ভালবাসা
প্রিয় বান্ধবীর এগিয়ে দেয়া কাঠপেন্সিলে,
বন্ধুর এনে দেয়া কাঁচা আমের সুবাসে,
কানামাছি কিশোর বেলার মুহূর্তে মুহূর্তে থাকে ভালবাসা।


পড়ার টেবিলের কোণে কোণে জড়িয়ে থাকে ভালবাসা,
এলোমেলো চুলে মায়ের হাত বুলিয়ে দেয়া,
অফিসফেরত ক্লান্ত বাবার অংক কষে দেয়া,
বইয়ের পাতায় পাতায় হরফের মত লেখা থাকে ভালবাসা।


খেলার মাঠে গগনবিদারী হৈচৈতে থাকে ভালবাসা
দূরে বসে থাকা মেয়েটার জ্বলজ্বলে চোখে,
চার-ছয় মারা ছেলেটার উজ্জ্বল হাসিমুখে,
ব্যর্থতার দুঃসময়ে পিঠে রাখা ভরসার হাতে থাকে ভালবাসা।


আবেগে ভরা ছোটখাট চিরকুটে থাকে ভালবাসা
শ্যামলের বাগানের চুরি করা গোলাপে,
কান মলে দেয়া দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়াতে,
দূরে দূরে থেকে চোখাচোখিতে অম্লান থাকে ভালবাসা।


জ্বরতপ্ত কপালে মায়ের হাতের চুড়িগাছার টুনটুন শব্দে থাকে ভালবাসা
সামান্য হাঁচিতে বাবার উদ্বেগে
ছড়ে যাওয়া কনুইয়ে বোনের হাত বুলানোতে
মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত আগে পর্যন্ত একাকার হয়ে থাকে ভালবাসা।


পড়াচুরির দায়ে স্যারের বকুনিতে সয়লাব থাকে ভালবাসা
খাতার এককোণে ‘ভেরি গুড’ লেখা অংশে
মাথায় হাত রেখে বুঝ দেয়া মারের শেষে,
আদর-শাসনের মিলমিশে প্রানবন্ত থাকে ভালবাসা।


বন্ধুর চুরি করে এনে দেয়া কলেজের ফীসে মিশে থাকে ভালবাসা
প্রেমিকার রাগত মুখের আড়ালে অশ্রুর ঝড়ে,
ওবাড়ির সলেমতের মায়ের হাতের আচারে,
রংবিহীন বৃষ্টিকণার মত এপারে-ওপারে ঝরে পড়ে ভালবাসা।


স্ত্রীর হাতের কৈ মাছের কোপ্তায় মিশে থাকে ভালবাসা
সন্তানের অপেক্ষারত দুটি চোখে
বৃদ্ধা মায়ের জায়নামাজে রাখা তসবি আর কোরানের স্পর্শে
আপনজনের অদৃশ্য আত্মার টানে টানে জড়িয়ে থাকে ভালবাসা।


বলপয়েন্টে লেখা প্রতিটি কবিতায় মিশে থাকে ভালবাসা
ডায়েরীর আকিঝুকি ভরা ছেঁড়া পাতায়
অর্ধসমাপ্ত কাহিনীর ভেবে রাখা পূর্ণতায়
দিনান্তের প্রতিটি কবিতায় এমনিভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকুক ভালবাসা।