( ১ম পর্ব )


“ঝিলিক ওঠ্ ওঠ্
কতো ব্যালা হইছে দ্যাখ তো !
বাসি উঠুন পড়ি আছে, মুরগির খাঁচা খুলতে আছে-
এই ছুঁড়ি ওঠ্ না রে ! বিটি ছেলির অতো ঘুম কিসের ?”-
কলের পাড় হতে-
মা’র চিৎকার আর বাসন মাজার আওয়াজে,
ঝিলিকের পুতুল খেলার স্বপ্ন ভেঙে যায় ।
ইশ্ আজ বর আসছিলো মা-টা সব কেঁচিয়ে দিলো !
ঘুম জড়ানো চোখে-
খালি পা ,রাতের এবড়ো-ঝেবড়ো চুল, বাসি মুখ
আর তাপ্পি দেওয়া ফ্রকে,  মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
“কি বুলছিলি তুই ?”
“কি বুলবো আর ? –উঠুনডা ঝাঁড় দে ,খাঁচাডা খুল্ গা ;
হাড়ি-কুড়ি মেজি তোর আব্বাকে খেতে দেবো- ও মুনিষে যাবে ;
দেরি হয়ি যাছে না ।”


এখন গেরস্তের মাঠে মাঠে পাকা ধান ; তাই
পেঁপে গাছের তলায় কাস্তেটা শান দিতে দিতে
গাজলুর চোখে ঝিলিক খেলে ওঠে আর ঝিলিকের স্বপ্নে ছড়িয়ে যায় ।


“তোর মাকে খাবারডা দি যেতে বোল্ তো !”
“মা ! এ্যাই মা……..
আব্বাকে খাবার দিয়ি যা ।”


স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে
মাটির দাওয়াতে বসে থাকা গাজলুর সামনে-
এক থালা বাসি ভাত এনে; শেফালি পাশে বসে ।
-“তোদের লেগি থুইছিস তো না সব আমাকে দিলি ?”
“না আছে । ঝিলিক খেয়ি ইস্কুলে যাবে ।”
“আর তুই খাবি না ?”
“কাল মাষ্টারনী বুলছিলো ধানগুলান ঝেড়ি রোদে দিতে; তাই
কাইলকি চাল একটু কম লিছিনু ।”
“এক কুচি পেঁয়াজ দে তো –ঝিলিকের মা । ”
“আজ পেঁয়াজ নাই এমনি খেইলাও ।”
“ধুর আর ভাল্লাগে না ,তুই খেইলিস রে! ”
শেফালি মনে মনে ভাবে ইশ্ কেনো যে বল্লাম ! ওমন কথা ।


মাথাল কাস্তে হাতে-
গাজলু উঠানে আসলে, ঝিলিক তার আব্বাকে খুব দেখে ;
আর পাশের বাড়ির মাষ্টারের সাথে মিল খোঁজে ,একটাও পাই না ।
যেমনটা মুন্নির সাথে তার । ভাবতে ভাবতে চিৎকার করে ওঠে-
“আব্বা দাঁড়াও! পানির বোতল লিছো ?”
এক ছুটে ঝিলিক কলতলা হতে- এক বোতল ঠান্ডা পানি এনে দেয় ।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গাজলু বলে-“এইটা আমার ব্যাটা ।”
বুকে গর্ব নিয়ে মুনিষে যায় । ঘরে না থাক-গেরস্তের
মাঠে মাঠে যে পেকেছে সোনালি ধান ।


………………………………………..চলবে ।