১.
কবিদের কথা কি মিথ্যে হয়!
সব কবিরাই তো বলে-
আগুন ঝরা ফাগুন, ফুল ফুটুক
আর নাই ফুটুক; আজ বসন্ত,
১৩ই ফেব্রুয়ারিতে যার বর্ণিল আগমন।


হ্যাঁ, বসন্তের অষ্টম দিনে কিংবা
ফেব্রুয়ারির কুড়ি তারিখে; এবার
রাত সারে দশটায় ফলে গেলো
কবিদের কথা; পুরান ঢাকা
কিংবা চকবাজার যা-ই বলো
আগুন আর আগুন, আর্তনাদ,
বাঁচার শেষ চেষ্টা, ওহ্
কত কি যে মনে পড়েছিলো তাদের!


ওহ্, সত্যিই, নিদারুণ! আগুন ঝরা ফাগুন!


২.
দমকল বাহিনীর ৩৭ টি দল
রাতভর করে গেলো আপ্রাণ চেষ্টা,
আগুন তো নেভাতেই হবে, হায়!হায়
চারিদিকে, আকাশ পথে উড়ে উড়েও
কত পানি ফেলা হলো!


পর দিন, ২১শে ফেব্রুয়ারি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এবং শোক দিবস,
ঠিক প্রভাতফেরি শুরু হওয়ার ক্ষনিক আগে
সফল হয়েছে দমকলকর্মীরা; কিন্তু ততক্ষণে
অনেক প্রাণও নিভে গেছে! চিরতরে।


এখনো ধোঁয়া আর স্বজনের স্বজনহারা
আহাজারি ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে- দেশজুড়ে,
বিদেশেও শোকের মাতম। আহ্, কী নিদারুণ !


শোকের মাসে, শোকের দিনে আরো শোক!
মনে পড়ে গেলো পিলখানার কথাও-
কি নির্মমতা! ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯।


৩.
টেলিভিশনের প্রায় অধিকাংশ চ্যানেল
সরাসরি দেখাচ্ছে 'চকবাজারের অগ্নিদুঃখ',
স্বজনের সন্ধানে স্বজনহারা স্বজনেরা
ক্যামেরাম্যান, সাংবাদিক, পুলিশ কিংবা
দমকলকর্মী- যাকেই পায়, জড়িয়ে ধরে, কাঁদে।


আমিও দেখি, টেলিভিশনের সামনে দাঁড়িয়ে,
ঘরের মেঝেতে কাঁপতে কাঁপতে-
দমকলকর্মীরা একে একে বের করে আনছে
পুড়ে অঙ্গার হওয়া নিথর দেহগুলো।


আমি যেনো দেখতে পাচ্ছি তাদের অপূর্ণ
শত স্বপ্ন আর পরিকল্পনার আহাজারি,
এদিকে পিতা কাঁদে, কাঁদে জনম দুখিনী,
কারো স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়ে
যেতে চাচ্ছে মাটি ফেটে অতলতলে,
কেউ বা প্রিয়তমার জন্য পাগলপ্রায়।


কেউ কেউ কাঁদে মা আর বাবার জন্য,
ভাই খোঁজে বোনের লাশ, কারো কারো বোনও
প্রিয় ভাইকে হারিয়ে বোবাকান্নায় স্তব্ধ!
কারো কারো প্রিয় বন্ধু বান্ধবীও অঙ্গার!


৪.
আমি আজও চেতনা ফিরে পাই না যেনো;
হায়! চকবাজার, শরীর শুধু নয়-
বুকের ভিতরে হৃদযন্ত্রটাও অচল হয়ে গেছে।


ওহ্, টেলিভিশনের পর্দার নিচের দিকে
অবিরত ভেসে চলছে খন্ডিত শিরোনাম-
মরদেহের পরিসংখ্যান বেড়েই চলছে!


এখনো তো শুকায়নি ঘা, ভুলেও যাই নি
২০১০ সালের ৩রা জুন, নিমতলি-র অগ্নিদুঃখ,
সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলেছিলো-
'একশত ঊনিশ জন, নিভে গেছে চিরতরে।।


ভাবছি, ছোট এই দেশটা  আর কত
বহন করে যাবে তার সন্তানদের দেহ পোড়া ছাই!


৫.
ওদিকে জোরসে চলছে- ২১শে বই মেলা,
কবিরাও ব্যস্ত তাদের প্রচারণা নিয়ে।
শোকে-দুঃখে ক্রেতা না আসলেও
তাদের প্রচার মাধ্যম ফেসবুক তো আছে,
অনেকে ফেসবুকে সরাসরি নিজের বইয়ের
ভালোমন্দ গুণগানে ব্যস্ত। আহ্, কবি!


কোন কবি বন্ধ করলো না তার বইয়ের দোকান,
ছুটে গেলো না চকবাজারে কিংবা হাসপাতালে,
কোন খোঁজ নিতে দেখলাম না কাউকে,
হায়রে ব্যবসা! বইয়ের মান যা-ই হোক;
বিক্রি হওয়া চাই-ই, চাই,
ঘন ঘন সেল্ফিও চাই আপলোড করা!


৬.
ভাষা দিবসের শোক, চকবাজারের শোক,
নিমতলির শোক কিংবা পিলখানা ট্রাজেডির
অবিস্মরণীয় শোক ছুঁয়ে গেলো না
২১শে বই মেলার মাঠ, কবিদের মন
কিংবা কবিতার গতরও ছুঁইতে পারে নি।


দিনভর চললো হাস্যজ্বল মুখে
কবিদের সেল্ফির খেলা, বইয়ের প্রচার,
আলোচনা-সমালোচনা আর অটোগ্রাফ!


৭.
আজ ২৫শে ফেব্রুয়ারি, পিলখানা ট্রাজেডি!
শোকের মাস এখনো হয় নি শেষ।
তবু; তৃপ্তির ঢেকুর এলো!
পাঁচ দিন পর আজ চকবাজার দুঃখে
দিনব্যাপী অর্ধনমিত থাকলো জাতীয় পতাকা।


আরোও একটা তৃপ্তির ঢেকুর এলো-
'ময়ূরপঙ্খি' (বিমান) ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী
মাহাদির স্বপ্ন গুড়িয়ে দিয়েছে সামরিক বাহিনী।


মাহাদি তার স্বপ্নকে বাস্তব করতে পারলে
ফেব্রুয়ারি হয়ে যেত কালো থেকে কালো।


ভাবনার হয় নি শেষ, ফেব্রুয়ারি!
আরো তিন দিন থাকবে! নতুন আর কিছু
না ঘটলেই ভালো; আর কাঁদতে চাই না কেউ।
-------------------------------------------
২৫/০২/১০১৯🖋️