রক্তপিপাসু শাসক আর শোষণের পৃথিবীতে
গ্রাম থেকে শুরু, বন্দর থেকে বন্দরে হেঁটে
                     পায়ের পাতার রক্ত ঝরায়ে,
চৈতী কিংবা মৌসুমি কড়া রোদে পিঠ পোড়ায়ে
অথবা কনকনে শীতের কাঁপুনি ভেদ করে
মাটি ও মানুষের জন্য অবিরত গেছো লড়ে,
গাছের তলে / খোলা আকাশের নিচে বসে–
দেশ, দেশের মাটি আর মানুষেরে ভালোবেসে।


তুমি ঝড়-তুফান, রাত কিংবা দিনে
মাটি ও মানুষের প্রেমে প্রতিবাদী বাক্য বানে,
অন্যায় আর জুলুমের গায়ে ঘা মেরে
শাসকগোষ্ঠীর গদি করে দিয়েছো নড়বড়ে।
তুমি ঐ কারাগারের নিগুঢ় অন্ধকারে বসে-
সৃষ্টি করেছো যত কথামালা কলমের ত্রাসে
গল্প-কবিতা, উপন্যাস-প্রবন্ধ, শেকল ভাঙার গান–
ওহে মহিয়সী, কি করে ভুলবো সেই সব অবদান?


সেদিন; সেই সব উত্তাল দিনে,
প্রতিক্ষেত্রে প্রতি ক্ষণে,
তুমি হয়েছিলে ওহে কবি–
উপমহাদেশে সবার হৃদয়ের ছবি,
ধর্ম-অধর্ম, জাত-পাত, বর্ণ ভুলে
তোমাকে বেসেছিলো ভালো সকলে।।


আর (১৯৪৭সাল) দেশ ভাগের পর!
স্ব-স্ব ধর্মমতে মানুষ হলো চরম স্বার্থপর,
কতক বললো– তুমি ছিলে হিন্দুদের জন্য,
কতকের দাবি– তুমি করেছো মুসলানেরে ধন্য,
আবার কেউ কেউ আজও বলে নির্দ্বিধায়–
'তুমি নাস্তিক ছিলে সৃষ্টির পাতায় পাতায়।'


যারা তোমাকে বিভাজনে ফেলে
মানুষের কাছ হতে দূর করে দিলে,
তাদের জন্য ছুড়ে দেই আমরণ ধিক্,
তোমার পরিচয়; তুমি ন্যায়ের কবি, বিশ্বপ্রেমিক।


তুমি প্রেমের কবি, তুমি গানের বুলবুলি,
ন্যায়ের জন্য ঝরায়েছো কলমের কালি,
অন্যায়ের সামনে তুমি জেগে উঠো দ্রোহে
ছিনিয়ে আনো সুবিচার; মরণ জ্বালাও সহে,
তোমার সৃষ্টিতে পড়লে চোখ!
হৃদয় ঘরে লাগে ভীষণ হোঁচট–
হিন্দু-মুসলিম, জাত-পাত, বর্ণ নেই তো বিভেদ
সাদা-কালো, ধনী-গরীবে নেই কোন ভেদাভেদ;
তাই, মনে জাগে প্রেম, অন্ধ বিবেক জেগে উঠে
ওহে কবি, তুমি সত্যের জয়গান বিদ্রোহীও বটে।
-----------------------------------------
২৭/০৮/২০১৯🖋️    
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের  মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। সেই সাথে তাঁর আত্মার পরকালীন শান্তি কামনা করি---